শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫

:::: রাঙ্গামাটি ::::







নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। এখানে পাহাড়ের কোল ঘেঁসে ঘুমিয়ে থাকে শান্ত জলের হ্রদ, নদী বয়ে চলে তার আপন মনে। সীমানার ওপাড়ে নীল আকাশ মিতালী করে হ্রদের সাথে, চুমু খায় পাহাড়ের বুকে। এখানে চলে পাহাড় নদী আর হ্রদের এক অপূর্ব মিলনমেলা যেখানে প্রকৃতি কথা বলে কবিতার ভাষায়। নদীর বাঁকে বাঁকে বাতাস সুর তোলে আপন মনে, গায় সুন্দরের গান। মুগ্ধ নয়নে শুধু চেয়ে থাকতে হয় অসহায় মানুষ হয়ে। চারিপাশ যেন পটুয়ার পটে আঁকা কোন জল রঙের ছবি। এখানে হাজার রঙের প্রজাপতি খেলা করে সবুজের মাঝে, রাতের আঁধারে দীপ জ্বেলে যায় লক্ষ কোটি জোনাকীর দল। কোন উপমাই যথেষ্ট নয় যতটা হলে বোঝানোয় যায় রাঙ্গামাটির অপরূপ সৌন্দর্য। এখানকার প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অদেখা এক ভূবন যেখান আপনার জন্য অপেক্ষা করছে নয়ানাভিরাম দৃশ্যপট।


পাখির কুহুতান, সবুজের মাখামাখি আর অসংখ্য নৃগোষ্ঠী এই জনপদকে দিয়েছে ভিন্ন এক রূপ। এখানে প্রায় ১৪টির মতো উপজাতী বসবাস করে। চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, বোম, খুমি, খেয়াং, পাংখোয়া, লুসাই, সুজ সাওতাল ও রাখাইন অন্যতম। নৃগোষ্ঠীর জীবন-যাপন ও সংগ্রাম আপনাকে যেমন মুগ্ধ করবে তেমনি মুগ্ধ করবে এর পর্যটন এলাকাগুলো। রাঙ্গামাটিতে ভ্রমন করার জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে কাপ্তাই লেক, পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, ঝুলন্ত ব্রিজ, পেদা টিংটিং, সুবলং ঝর্না, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমন অন্যতম ও অসাধারণ। । কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মানের ফলে সৃষ্টি হয় সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ। মূলত পানি বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য এই বাঁধ নির্মিত হয়। অসংখ্য পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা বিশাল কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহারে অনুভূতি এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এতে করে অনুভূত হবে রোমাঞ্চকর অনুভূতির । দেশীয় ইঞ্জিন নৌকা,লঞ্চ, স্পিডবোটে দিনভর নৌবিহার করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো আপনি চাইলে এই হ্রদ ঘুরতে ঘুরতেই দেখে ফেলতে পারবেন রাঙ্গামাটির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো। হ্রদটি ঘুরে দেখার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি ভাল নৌযানের। রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনি ট্রলার বা বোট ভাড়া করতে পারবেন, সারাদিনের জন্য ভাড়া করলে দেড় থেকে দু হাজার পর্যন্ত টাকা নিবে। একটা মাঝারি আকৃতির বোটে ত্রিশ জন বসা যায়। পর্যটন থেকেও বোট ভাড়া করা যায়, তবে রেট বেশি। ছোট বোটের ভাড়াও কম নয়। রিজার্ভ বাজার থেকে বোট বা ট্রলার ভাড়া করলে একটু কম দামে পাওয়া যাবে। এক হাজার থেকে বারোশর মধ্যে হয়ে যাবে। তবে পর্যটন বা অন্যান্য সংস্থার ট্রলারের মতো দেখতে সুন্দর না বলে অনেকে সেগুলো ভাড়া নিতে চান না। এগুলো ছাড়াও কেয়ারী সিন্দবাদ আছে যেটি রাঙ্গামাটি থেকে সুবলংয়ের উদ্দেশ্যে দিনে দুবার যাতায়াত করে। অবশ্য নিজের মতো করে ঘুরতে চাইলে সেগুলোতে না যাওয়াই ভাল। কারণ এই ট্রিপগুলো বুড়িছোঁয়ার মতো করে একেকটা জায়গায় যায় আর ফিরে আসে। এতে মন ভরে না, থাকে না স্বাধীনতা। সুতরাং একলা চলো নীতিই উত্তম।
কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমনের জন্য একটু ভোরে ভোরে রওয়ানা হওয়াই উত্তম। হ্রদের মাঝখান দিয়ে নৌভ্রমন আপনার মনে এমনই এক সুখস্মৃতি তৈরি করবে যা আপনি কখনোই ভূলতে পারবেন না। যে দিকে তাকাবেন কেবল পানি আর তার মাঝে মাঝে ছোট ছোট টিলা। লাল মাটির টিলাগুলোর গাঁয়ে সবুজের সমারোহ, যেন এগুলো ঢেকে আছে সবুজ কার্পেটে। অসহ্য সুন্দর যে দৃশ্য। কখনো ডানে কখনো বামে আবার কখনো বা মনে হবে সম্মুখে সীমাহীন পথ। এখানে জল, পাহাড় আর আপনি ছাড়া আর কিছুই নেই চারিদিকে। এ এক অসাধারন অনুভুতি। কখনো কখনো বেশ বড় বড় পাহাড় আপনার চোখে পড়বে। এর দৃষ্টিনন্দন শীলা খন্ড আপনার নজর কাড়বেই। মন চাইবে উড়াল দিয়ে চলে যাই সেখানে। চাইলে অবশ্য যেতেও পারেন। একটু কষ্টসাধ্য- এই আর কি। প্রকৃতি আর ভ্রমন পিপাষু মানুষ উভয়রই রয়েছে একটি নিজস্ব ভাষা। প্রকৃতির সাথে কথা বলতে বলতে কখনযে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। এভাবে চলতে চলতে একে একে আপনি পাড়ি দেবেন কাপ্তাই হ্রদ, সুবলং ঝর্না, সুবলং বাজার, পেদা টিং টিং, রাজবাড়ী, রাজ বনবিহার, ঝুলন্ত সেতু আর পর্যটন মোলেট সহ অনেক কিছু। সময়ের আঁচড় পরবে ঘড়ির কাটায় কিন্তু তখনো আপনি অভূক্ত এক ভ্রমনপিয়াসী।
থাকার জন্য রাঙ্গামাটিতে সরকারী বেসরকারী অনেকগুলো হোলে ও রেষ্ট হাউজ রয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু বোডিং পাওয়া যায় থাকার জন্য। তবে বোডিংগুলো খুব একটা সুবিধার নয়। অনেকগুলো হোটেল মোটেল থাকলেও ৩/৪টি হোটেল উল্লেখযোগ্য।

পার্শ্ববর্তী দৃশ্যাবলী
সুবলং ঝরনা
রাঙ্গামাটির অন্যতম সুন্দর দর্শনীয় স্থান এটি। চমৎকার একটি জলপ্রপাত এই স্থানকে দিয়েছে ভিন্ন একটি চরিত্র। রাঙ্গামাটি শহর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে অবসথিত মনোরম এই ঝরনাটি। এ ঝর্নার রূপ আপনাকে মোটেও আশাহত করবে না। সময়টি যদি হয় বর্ষাকাল তবে আপনি সত্যিই ভাগ্যবান বলতে হবে। কেননা এই সময় ঝর্না হয়ে উঠে নবযৌবনা, সয়ম্বরা। অপলক দৃষ্টিতে সে ঝর্নার রূপ আপনি দেখবেন সম্মোহিত হয়। এই স্থানটি বেশ সাজানো গোছানো। ফুলের বাগান, উচু বসার স্থান এবং হাটার জন্য ব্রিজ ও রাস্তা আপনাকে বিমোহিত করবে। ঝর্নাস্নান কিংবা দর্শন শেষে আপনি সামনে এগিয়ে গেলে পাবেন সুবলং বাজার। হ্রদের তীরে অবস্থিত স্থানীয় এই বাজারে রয়েছে একটি সেনা ক্যাম্প। বাজারটি একেবারে ছোট নয়। এখানকার খাবার বেশ সুস্বাদু। দুপুরের খাবারটি চাইলে এখানে সেরে নিতে পারেন। হ্রদ থেকে ধরা মাছের ঝোল আর আলুভর্তা রসনা বিলাসের জন্য মন্দ নয়। তবে সাবধান- এই এলাকায় প্রায়শই বন্য হাতির হামলা হয়ে থাকে। তাই চোখ কান একটু খোলা রাখাই শ্রেয়।
রাজবাড়ি
রাঙ্গামাটি শহরেই অবসথিত রাজবাড়ি। চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও তার মা রানী আরতি রায় এ রাজবাড়িতে থাকেন বর্তমানে। চারদিকে হ্রদ বেষ্টিত এই রাজবাড়ি পুরনো হলেও দেখতে ও বেড়াতে ভীষন ভাল লাগে। রাজদরবার, কাচারি, সজ্জিত কামানসহ দেখার মতো অনেক কিছু আছে। রাজবাড়ীর নিরিবিলি পরিবেশ, সবুজ বাঁশের ঝাড় আর পাখির কলকাকলি আপনাকে মহুর্তের জন্য অঁচল করে দেবে। রাজবাড়ীর পাশেই উপজাতীয় নারীরা তাদের হাতে বুনা বস্ত্র সম্ভার নিয়ে বসে থাকে বিকিকিনির জন্য। এসব পন্য আপনার প্রয়োজনের পাশাপাশি মেটাবে রুচির তৃষ্ণা।
রাজবন বিহার
রাজবাড়ির পাশেই আন্তর্জাতিক খ্যাত এই বৌদ্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। এখানে অবস্থান করেন বৌদ্ব আর্য পুরুষ শ্রাবক বুদ্ধু সর্বজন পূজ্য শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাসহবির বনভান্তে। এই বৌদ্ব বিহারে প্রত্যেক বছরের কঠিন চীবর দানোৎসবে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। এছাড়া প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনাথী ও পুণ্যানর্থীর ভিড়ে মুখরিত থাকে রাজবন বিহার এলাকা। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বেশ কয়েকটি বৌদ্ব মন্দির, বিশ্রামগার, হাসপাতাল, তাবতিংস স্বর্গসহ অনেক কিছু রয়েছে দেখার মত।
ঝুলন্ত ব্রিজ ও পর্যটন মোটেল
রাঙ্গামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত সরকরি পর্যটন মোটেল। পর্যটকদের জন্য খুবই দৃষ্টিকাড়া ও আকর্ষনীয় স্থান এটি।
পর্যটন মোটেলেই অবস্থিত ঝুলন্ত ব্রিজটি, যা পর্যটন এলাকাকে আরও বেশি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দিত করেছে। সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে এটি। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষনের কারনে এবং এর নির্মানশৈলির কারনে ঝুলন্ত ব্রিজ আজ রাঙ্গামাটির নিদর্শন হয়ে দাড়িয়ে আছে।
পেদা টিং টিং
কাপ্তাই হ্রদের চারিদিকে কেবল পাহাড় আর হ্রদ, যেন প্রকৃতির মাঝে আপিন এক আগন্তুক মাত্র। বুনো প্রকৃতি ছাড়া আর কিছুই আশা করা যায় না এখানে। কিন্তু আপনি অবাক হবেন যখন চলতি পথে কোন একটি টিলার উপর দেখবেন “পেদা টিং টিং”। এমন এক পরিবেশে যেখানে আপনি এক গ্লাস খাবার পানি পাবেন না, সেখানে পেদা টিং টিং আপনার জন্য চা, কফি আর চিকেন ফ্রাই নিয়ে অপেক্ষা করছে। সত্যিই হতবাক করার মত ব্যাপার।
পেদা টিং টিং একটা চাকমা শব্দগুচ্ছ, যার অর্থ হচ্ছে পেট টান টান। অর্থাৎ মারাত্মকভাবে খাওয়ার পর পেটের যে টান টান অবস্থা থাকে, সেটাকেই বলা হয় পেদা টিং টিং। রাঙ্গামাটি শহর থেকে মাত্র ৪-৫ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই হ্রদের ভসমান একটি পাহাড়ে অবসথিত এই পর্যটন সংস্থা। এখানে রেস্তোরা, কটেজ, নৌবিহার ব্যবস্থা, সেগুন বাগান ও অসংখ্য বানর রয়েছে। ইচ্ছে করলে মনোজ্ঞ কোন অনুষ্ঠানও আয়োজন করা যায়। শুধু তাই নয় আপনি চাইলে রাত্রিযাপনও করতে পারবেন। এখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি কক্ষ সদৃশ ঘর। চাঁদনী রাতে এমন একটি পাহাড়ের উপর রাত্র যাপন- সত্যিই দুর্লব।
উপজাতীয় জাদুঘর
রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান রাস্তার পাশেই এই জাদুঘরটি স্থাপিত হয়েছে। উপজাতীয় কৃষ্টি,সংস্কৃতি, জীবনধারার নানান নদর্শন ও ব্যিবহার্য জিনিসপত্র এখানে রাখা হয়েছে এখানে।
তবলছড়ি চাকমা বাজার
রাঙামাটি শহরে এটি হলো একটি প্রধান উপজাতীয় বাজার। সপ্তাহে বুধ এবং শনিবার এ বাজার বসে। উপজাতীয় কিশোর-কিশোরী, নারী এবং পুরুষরা এখানে আসে নানা ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে। পাহাড়ি মানুষের সঙ্গে মেশার, তাদের সঙ্গে কথা বলার এ হলো আপনার জন্য চমৎকার সুযোগ।
কাসালং
জলপথে যেতে হয় কাসালং। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে প্রতিদিন সকাল আটটায় কাসালংয়ের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চে যেতে যেতে নদীর দুই পাশের দৃশ্যাবলীও আপনাকে পুলকিত করবে। কাসালংয়ে ছোট-বড় বেশ কটি ঝরনা রয়েছে। এসব ঝরনার শব্দ আপনার কানে বৃষ্টির শব্দের মতো অনুভূত হবে। কাসালংয়ে মুরং, বম, বনজোগি, থিয়াং, পাডেনাই উপজাতীয়দের জীবনধারাও আপনাকে মুগ্ধ করবে।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
১৩ হাজার একর এলাকা নিয়ে কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেঁষে কাপ্তাই উপজেলায় গড়ে উঠেছে ‘কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান’। সারি সারি পাহাড় আর প্রকৃতির অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে এখানে। এ বনভূমি বিচিত্র বন্যপ্রাণী ও পাখ-পাখালির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। বর্ষাকালে মেঘ পাহাড়ের মিতালী আর শীতে কুয়াশার লুকোচুরি- প্রকৃতির এমন কারুকাজ বেশ রোমঞ্চকর। বনের ভেতর সারি সারি সেগুন, জারুল, গামার আর কড়ই গাছের মাঝ বরাবর পায়ে হেঁটে চলা পর্যটকদের অফুরন্ত আনন্দে খোরাক। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে রয়েছে বন বিভাগের দু’টি বিশ্রামাগার। বিশ্রামাগারের চারপাশে নদী, পাহাড় আর সবুজের সহাবস্থান অপূর্ব সৌন্দর্যের আবহ তৈরি করেছে। মূলত জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণ এবং ইকো-ট্যুরিজমের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। রাঙামাটি জেলা সদর হতে এর দূরত্ব আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার। উদ্যানে যেতে হলে চট্টগ্রাম হতে সরাসরি কাপ্তাই যেতে হবে।

যেভাবে যেতে হবে

ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন স্থান হতে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। ঢাকা হতে বেশ কয়েকটি বাস প্রতিদিন ছেড়ে যায় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে। শ্যামলী, সায়েদাবাদ, কলাবাগান হতে প্রতিদিনই গ্রীনলাইন, এস.আলম, ইউনিক সার্ভিস বাসগুলো ছাড়ে। এগুলোর মাধ্যমে সরাসরি চলে যেতে পারেন রাঙ্গামাটি। 
অথবা ঢাকা বা অন্য জেলা হতে বাস, ট্রেনে কিংবা বিমানে করে যেতে পারেন চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম হতে অনেকগুলো বিলাশবহুল ও লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত। সেগুলোর মাধ্যমেও পৌছতে পারেন রাঙ্গামাটি। তবে সরাসরি বাস সার্ভিসই ঝামেলা ও ঝুক্কিমুক্ত।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য রাঙ্গামাটিতে সরকারী বেসরকারী অনেকগুলো হোটেল ও গেষ্ট হাউজ রয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু বোডিং পাওয়া যায় থাকার জন্য। বোডিংগুলোতে খরচ কিছুটা কম তবেথাকার জন্য খুব একটা সুবিধার নয়। নিন্মে কয়েকটি হোটেল এর বর্ননা দেয়া হলোঃ
(১) পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স
  • ১২ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রেতিটির ভাড়াঃ ১৭২৫ টাকা
  • ৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়াঃ ৮০৫ টাকা
    যোগযোগ
    ফোনঃ ০৩৫১-৬৩১২৬ (অফিস)
(২) হোটেল সুফিয়া
  • ২৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রেতিটির ভাড়াঃ ৯০০ টাকা (একক), ১২৫০ (দ্বৈত)
  • ৩৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়াঃ ৬০০ টাকা
    যোগাযোগ
    ০৩৫১-৬২১৪৫, ৬১১৭৪, ০১৫৫৩৪০৯১৪৯
(৩) হোটেল গ্রীন ক্যাসেল
  • ৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রেতিটির ভাড়াঃ ১১৫০ হতে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত
  • ১৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়াঃ ৭৫০ হতে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত
    যোগাযোগঃ
    ০৩৫১-৭১২১৪, ৬১২০০, ০১৭২৬-৫১১৫৩২, ০১৮১৫-৪৫৯১৪৬
এছাড়াও রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হোটেল যেমন * হোটেল জজ * হোটেল আল মোবা * হোটেল মাউন্টেন ভিউ * হোটেল ডিগনিটি * হোটেল সাফিয়া * হোটেল ড্রিমল্যান্ড ইত্যাদি

অনুমিত খরচ

ট্রলার ভাড়া
দেশীয় ইঞ্জিন নৌকায় রাঙ্গামাটি শহর হতে এই ঝরনা দেখে আসতে আসা- যাওয়াসহ সময় লাগে ২ ঘণ্টার মতো। ভাড়া ৩০০-৪০০ টাকা।
সারাদিন কাপ্তাই হ্রদ ঘুরতে আপনার ট্রলার ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা।

খাওয়া দাওয়া

রাঙ্গামাটি এসে স্থানীয় আদিবাসীদের খাবার না খেলে পুরো ভ্রমনটাই অপূর্ন থেকে যায়। তাই ইচ্ছে করলে এবং যদি কপাল ভাল হয় তবে আপনও স্বাদ নিতে পারেন আদিবাসীদের হরেক রকম খাবারের। এদের অনেকগুলো পদের মধ্যে কয়েকটি পদ খুবই ভিন্ন প্রকৃতির ও সুস্বাদু। আপনি যে কোন হেটেলেই এসব খাবার পাবেন না। যদি আদিবাসীদের সাথে সখ্যতা থাকে বা করে নিতে পারেন তবে এই খাবারের স্বাদ নেয়া আপনার জন্য সজহতর ও আকর্ষনীয় হবে।
  • বিগল বিচি
    বিগল বিচি দেখতে ছোট ছোট দানার মতো- হালকা করে তেলে ভাজা হয়। এমনিতে এর কোনো স্বাদ নেই। এটি মূলত খেতে হয় শুটকি মাছ ও কাঁচামরিচের ভর্তার সাথে। তখনই আসল স্বাদ পাওয়া যায়।
  • কচি বাঁশের তরকারী
    এটি একটি অসাধারণ আইটেম। রাঙ্গামাটি এসে এই খাবারটি হতে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না। কচি বাঁশের তরকারি। স্বাদ অসাধারণ! পুঁই বা অন্যান্য শাকের সাথে এটি রান্না করা যায়, অথবা ভাজি। যে ভাবেই খান না কেন এটি হবে আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। কচি বাঁশ খেতে খুবই নরম- মুখে দেওয়া মাত্র গলে যায়। আসলে এগুলোর স্বাদ বলে বুঝানো যাবে না! বুঝতে হলে খেতে হবে!
  • কেবাং
    এটি আসলে খাবার রান্নার একটি পদ্ধতি। শক্তসামর্থ বাঁশের খোলের ভেতর শূকর ভরে সেখানে তেল-মশলা দিয়ে বাঁশটিকে পোড়ানো বা ঝলসানো হয়েছে। তবে আপনি শুকর খেতে না চাইলে কাঁচকি বা অন্যান্য মাছ, মাংস ইত্যাদির কেবাং করে খেতে পারেন। এর স্বাদ এবং অভিজ্ঞতা আপনাকে স্মৃতির পাতা ঘুড়াবে সারাজীবন।
  • কাঁচকি ফ্রাই
    এটি অবশ্য আদিবাসী কোন খাবার নয়। তবে এর স্বাদ অতুলনীয়। সাধারণ পদ্ধতিতেই বড় বড় কাচকি মাছ তেলের উপর ভাজা হয়। গরম গরম খেতে ভীষন মজার খাবার এটি। রাঙ্গামাটির অনেক হোটেলেই এই খাবারটি পাবেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

দেশের গোন্ডির পেরিয়ে, আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ... সড়ক পথে ঘুরে এলাম ছবির মতো সুন্দর গোছানো দেশ ভূটান.......

দেশের গোন্ডির পেরিয়ে, আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ... সড়ক পথে ঘুরে এলাম ছবির মতো সুন্দর গোছানো দেশ ভূটান....... কিভাবে যাবেনঃ ভূটান ভ্রমণের জ...