ঢাকাকে বাইরের শত্রু থেকে রক্ষার জন্য যে চারটি জলদুর্গ নির্মিত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম মুন্সীগঞ্জ জেলার ইদ্রাকপুর দুর্গ। মোগল আমলে নির্মিত দুর্গটি সাড়ে ৩০০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অটুট রয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গের এক সময়কার রাজধানী ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রাচীন বিক্রমপুরের অন্তর্গত মুন্সীগঞ্জ জেলা। রাজধানী থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক এ জনপদ। ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ইদ্রাকপুর দুর্গের নামানুসারে এ এলাকার নাম ছিল ইদ্রাকপুর। ব্রিটিশ শাসনামলের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবাদে এ অঞ্চলেরই রামপালের কাজী কসবা গ্রামের মুন্সী এনায়েত আলীর জমিদারির আওতায় আসে এলাকাটি। তখন থেকে ধীরে ধীরে এর নাম হয় মুন্সীগঞ্জ।
পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী, ইছামতি ও শীতলক্ষ্যা এ জেলার প্রধান নদী। প্রায়
৯৫৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জেলার ছয়টি উপজেলা হলো মুন্সীগঞ্জ সদর,
টঙ্গীবাড়ি, শ্রীনগর, লৌহজং, গজারিয়া এবং সিরাজদীখান। শ্রীজ্ঞান অতীশ
দীপঙ্কর, জগদীশ চন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, সরোজিনী নাইডু,
সত্যেন সেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, সমরেশ বসু, শীর্ষেন্দু
মুখোপাধ্যায়, হুমায়ুন আজাদ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম এ জেলাতেই।
মুন্সীগঞ্জ শহরের ইদ্রাকপুরে অবস্থিত এ দুর্গটি। মোগল সুবাদার মীর জুমলা
১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান জেলা সদরে পুরনো ইছামতি নদীর তীরে ইদ্রাকপুরে
দুর্গটি নির্মাণ করেন। নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ ও সোনাকান্দা দুর্গের চেয়ে
এটি আকারে কিছুটা ছোট।
মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে ঢাকা ও
নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকা রক্ষা করার জন্য নির্মিত হয়েছিল এই
দুর্গটি। সুড়ঙ্গ পথে ঢাকার লালবাগ দুর্গের সঙ্গে এই দুর্গের সংযোগ ছিল বলে
জনশ্রুতি আছে। দুর্গের ভেতর থেকে শত্রু পক্ষের প্রতি গোলা নিক্ষেপ করার
জন্য চারদিকের প্রাচীরের গায়ে রয়েছে অনেক ছিদ্র। বাংলাদেশে মোগল
স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে ইদ্রাকপুর দুর্গটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে
ঘোষিত হয় ১৯০৯ সালে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন