শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৫

:::: কুয়াকাটা ::::

নগরের ইট কাঠ পাথরের তৈরী বড় বড় বাক্সের মত বাড়ি গুলোতে বাস করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে নগরের মানুষ। প্রকৃতিকে একটু কাছে থেকে দেখার সুযোগ কম। সেজন্য একটু অবসর পেলেই মানুষ ছুটে যায় কোন সবুজ ঘাসে, কোন নদীর পাশে অথবা কোন সমুদ্রের ধারে। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও এখানে দেখার আছে অনেক অখ্যাত ও বিখ্যাত স্থান। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মাত্র সমুদ্র সৈকত আছে যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এক সাথে দেখা যায়। দেখতে মনে হবে সমুদ্রের পেট চিরে সূর্য উদয় হওয়া এবং সমুদ্রের বক্ষে সূর্যকে হারিয়া যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করা নিঃসন্দেহে ভাগ্যের ব্যপার। আর এই সমুদ্র সৈকতটির নাম হলো কুয়াকাটা যা কিনা সাগরকন্যা নামে পরিচিত। এটি এমনই একটি সৈকত যা দেখে আপনার মন আপনা আপনি ভাল হয় যাবে। সব ক্লান্তি দুর হয়ে যাবে নিমিষেই।

কুয়াকাটা সমুদ্র মাত্র ২০ কিলোমিটার লম্বা। রাস্তা থেকে সৈকতে এসে নামলে ডানে লেবুচর ও ফাতরার বন এবং বামে গঙ্গামায়ার চর। ছোট এই সৈকতে তেমন কোন আভিজাত্য বা চাকচিক্য নেই। এ যেন প্রকৃতির নিজের হাতে সাজানো কোন ছবি। দেখলেই কেমন যেন আপন আপন মনে হয়। একদিকে চোখ রাখলে কেবল সাগর আর জলরাশি আর অন্যদিকে নারিকেল গাছের সারি। নারিকেল গাছের চিরিচিরি পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যাস্ত যেন এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। আর রাতটি যদি হয় পূর্নিমার রাত তবে আপনি নির্ঘাত হারিয়ে যাবেন নষ্টালজিয়ায়।
কুয়াকাটার সামুদ্রিক মাছের রান্না খুবই সুস্বাদু। এখানকার তাজা মাছ আর সবজী আপনাকে দ্বিতীয়বার যেতে বাধ্য করবে। শুধু তাই নয় এখানে খাবারের মূল্যও বেশ কম। সুতরাং স্বল্প খরচে পেতে পারেন সর্বাধিক স্বাদের খাবারটি।


ইতিহাস
কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। এটি পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। সমুদ্র সৈকত হিসেবে কুয়াকাটা অনন্য এ কারণে যে, এখানে একই স্থানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উভয়ই দেখা যায়। 

কুয়াকটা নামটি “কুয়া” বা “কুপ” শব্দটি থেকে উৎপত্তি হয়েছে। কুপ বা কুয়া শব্দটির সাথে আমরা কম বেশী সবাই পরিচিত যা কিনা একটি গর্ত বিশেষ যেখান থেকে পানি উত্তোলন করা হয়। আঠারোশ শতকে মোঘল সাম্রাজ্য দ্বারা যখন রাখাইনরা আরাকান তথা বর্তমান মায়ানমার থেকে বিতারিত হয় তখন তারা এই অঞ্চলে এসে বসবাস করা শুরু করে। কিন্তু সমুদ্র উপকুল হওয়ায় এখানে নোনা জলের আধিক্য বেশী ছিল। তখন রাখাইনদের মিষ্টি পানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ অবস্থায় তারা নিজেদের প্রয়োজনে একাধিক কুয়া খনন করতে থাকে। এক পর্যায় এই অঞ্চেলটির নাম হয়ে যায় কুয়াকাটা।

পার্শ্ববর্তী দৃশ্যাবলী
  • লেবুচর ও ফাতরার বন


সৈকতে গেলেই দেখেতে পাবেন অনেক মটরসাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। নিজে চালাতে পারলে মটরসাইকেল চালিয়ে চলে যেতে পারেন লেবুচর। ভাটার সময় মটর সাইকেল নিয়ে সৈকত ধরেই চলে যেতে পারবেন লেবুচর। সে এক অভাবনীয় অনুভূতি। লেবুচর থেকে খুব কাছেই ফাতরার বন। বলা হয়ে থাকে এই ফাতরার বন থেকেই শুরু সুন্দরবনের সীমানা। সুতরাং যাদের সুন্দরবন দেখা হয়নি তারা ইচ্ছা করলে ঘুরে আসতে পারেন ফাতরার বন। সেখানে যেতে চাইলে সৈকত থেকে ট্রলার ভাড়া করে যেতে হবে। আর এই ভ্রমনটি হবে আপনার জন্য একটি রোমাঞ্চকর ভ্রমণ। আপনার ট্রলারটি যখন সমুদে্রর সাদা ঢেউ কেটে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে মনে হবে যেন সিনেমার কোন স্বপ্ন দৃশ্য পাড়ি দিচ্ছেন।

টানা দেড় ঘন্টা ট্রলার চালিয়ে গেলে আপনি পৌছে যাবেন ফাতরার বন। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা খুব একটা নেই। আর এখানে স্থানীয় লোকজনও খুব একটা দেখা যায় না। ফাতরার বনে নামলে পরে আপনার চোখে পড়বে মাইলের পর মাইল লম্বা বন-জঙ্গল। অনেকের মনে হতে পারে আপনি সুন্দরবনে এসে নেমেছেন। আসলে এটি আমতলী ফরেষ্ট রেঞ্জ। এখানে একটি বাংলো আছে আর পাশেই রয়েছে একটি সুন্দর পুকুর। একানে বন্যপ্রানীর বিচরণ নেই বললেই চলে। তবে পাখির কুহুতান হতে আপনি বঞ্চিত হবেন না এটা নিশ্চিত বলা যায়। 

বনের গভীরে চলে গেছে নদী। আপনি ইচ্ছিা করলে ট্রলার নিয়ে আরো গহীনে যেতে পারেন। তাতে আপনার অবিজ্ঞতার ঝুলি কিছুটা হলেও বাড়বে। গহীনের নিস্তব্দতা আপনাকে আরো আপ্লুত করবে।

  • গঙ্গামায়ার চর
সমুদ্রে নেমে বামে গেলেই পাবেন গঙ্গামায়ার চর। মোটর সাইকেল নিয়েই চলে যেতে পারবেন সেখানে। তবে আপনাকে আর আপনার বাহনটিকে একবার মাত্র নৌকায় করে নদী পার হতে হবে। অপূর্ব এই চরটি দেখে আপনার সব ক্লান্তি দুর হয়ে যাবে। বিশেষ করে বালুকাময় সৈকতের উপর হাজার হাজার লাল কাকড়ার বিচরণ আপনাকে মোহিত করবে। মুহুর্তেই আপনার মনে হবে যেন প্রকৃতি আপনার জন্য লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। এখানে ভ্রমন শেষে আপন ইচ্ছা করলে নদী পার না হয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে ভীতরের রাস্তা দিয়ে পৌছে যেতে পারেন আপনার হোটেলে। তাতে উভয় রাস্তাই আপনার দেখা হয়ে যাবে।

  • বৌদ্ধমন্দির ও রাখাইন পল্লী



কুয়াকাটার খুব নিকটেই অবস্থিত মিস্ত্রিপাড়া। এখানেই দেখতে পাবেন আপনি বৌদ্ধ মন্দির যেখানে রয়েছে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার একটি বুদ্ধমূর্তি। আর পাশেই রয়েছে পবিত্র কুয়া। মন্দির আর পবিত্র কূয়া দেখে আপনার ভাল লাগবে এটা বলা যায় অবলিলায়। বৌদ্ধ মন্দিরের সাথে আপনার জন্য আর একটি জিনিস অপেক্ষা করবে, আর সেটা হলো রাখাইন পল্লী। রাখাইন উপজাতীদের আবাসস্থল এখানে। আপনি এই পল্লী ঘুরে দেখে নিতে পারেন তাদের জীবন যাবন আর হাজার পণ্যের পসরা। রাখাইন মেয়েদের নিজের হাতে বুনানো কাপড় আপনাকে নিঃসন্দেহে প্রলুব্দ করবে তা কিনে নিত। এই স্থানটি ভ্রমন করে পরম তৃপ্তি নিয়েই আপনি বিকেলে আগে ফিরে যেতে পারেন কুয়াকাটা সৈকতে।

  • জেলে পল্লী


জেলে পল্লী আর একটি জায়গা যেখানে আপনি ঘুরতে যেতে পারেন আর উপভোগ করতে পারেন তাদের জীবন যাপন। আর আপনি যদি এডভেঞ্চারে বিশ্বাসী হন তবে জেলেদের সাথে চলে যেতে পারে সমুদ্রে মৎসশিকারে। তবে সে ক্ষেত্রে যদি জেলেরা আপনাকে নিয়ে যেতে রাজি হয়। তাহলে এটি হবে আপনার জীবনের একটি বড় অভিজ্ঞতা আর েরামঞ্চকর ভ্রমন যা আপনি আর েকাথাও পাবেন না। আপনি আর একটি কাজ করতে পারেন। আর তা হলো মাছ সংগ্রহ। আপনি এখানে সুলভ মূল্যে ইলিশ মাছ কিনতে পারেন এবং নিজে কিংবা হোটেলের বাবুর্চির দ্বারা রান্না করে খেতে পারেন। যদি আপনার বারবি-কিউ করার অভিজ্ঞতা থাকে তবে একবার ইলিশের বারবি-কিউ করে দখেুন, এটি হবে আপনার জীবনের আর একটি স্মরণীয় স্বাদ ও ঘটনা।


যেভাবে যেতে হবে

ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে সাকুরা পরিবহন ছাড়াও বিআরটিসি পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকায় যায়। আপনি এসব বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ২০০ মিটার দূরে নামিয়ে দিবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা।
যারা নদী পথে যেতে চান তারা ঢাকা সদরঘাট হতে পটুয়াখালীর লঞ্চে করে চলে যেতে পারেন পটুয়াখালী আর সেখানথেকে বাসে করে সোজা কুয়াকাটা। এটি সর্বাধিক আরামের ভ্রমন। কেননা ঢাকা থেকে পটুয়াখলী পর্যন্ত অন্তত একটি বিলাশবহুল আর আয়েশের ভ্রবন দিতে পারবেন। যারা কখনো লঞ্চে ভ্রমন করেননি তাদের জন্য এটি হবে একটি উল্লেখযোগ্য ভ্রমন।
আর হাতে একটু বেশী সময় থাকলে আপনি ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে খুলনায় আসার অনেক ভালো বাস পাওয়া যাবে। খুলনা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টায় একটি বিআরটিসি বাস ছাড়ে। খুলনা থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় ৭/৮ ঘন্টা। খুলনা থেকে বাসভাড়া ২৭০ টাকা।
আর উত্তরবঙ্গ থেকে আসতে চাইলে সৈয়দপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে আসতে পারবেন। রাত্রের টে্রনে আসলে সকাল ৭ টার বিআরটিসি বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন
বাস থেকে নামার সাথে সাথে আপনার আশেপাশে অনেক দালাল ঘোরাঘুড়ি করবে। তারা তাদের পরিচিত হোটেলে উঠিয়ে দিতে চাইবে। এর বিনিমিয়ে তারা সেখান থেকে কমিশণন পায়। আপনি তাদের কাছে অনেক হোটেলের তথ্য পাবেন। অবশ্যই নিজে গিয়ে হোটেল কক্ষ দেখে যদি পছন্দ হয় তবেই নিবেন। ভূলেও দালালদের হাতে অগ্রিম টাকা দিবেন না। কুয়াকাটা বীচের পাশের বাধের রাস্তার দুপাশে এবং মেইন রোডের আশে পাশে অনেক হোটেল, মোটেল ও বাংলো পাবেন। আপনার সুবিধামত যে কোন একটিতে উঠতে পারেন। সেখানে প্রায় ৫০/৬০টি ব্যক্তি উদ্যোগের হোটেল ও মোটেল আছে। এ সকল হোটেলে ও মোটেলে ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও সেখানে দুটি সরকারী ডাকবাংলো আছে। একটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের অপরটি এলজিইডি মন্ত্রানালয়ের অধীনে। সরকারী কর্মকর্তারা আগে থেকে যোগাযোগ করলে পেয়েও যেতে পারেন এই দুটোর একটি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

দেশের গোন্ডির পেরিয়ে, আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ... সড়ক পথে ঘুরে এলাম ছবির মতো সুন্দর গোছানো দেশ ভূটান.......

দেশের গোন্ডির পেরিয়ে, আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ... সড়ক পথে ঘুরে এলাম ছবির মতো সুন্দর গোছানো দেশ ভূটান....... কিভাবে যাবেনঃ ভূটান ভ্রমণের জ...