শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫

:::: নাফাখুম ঝর্না ::::






বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রি একটি মারমা অধু্যসিত এলাকা। মারমা ভাষায় ‘খুম’ মানে হচ্ছে জলপ্রপাত। রেমাক্রি থেকে তিন ঘন্টার হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় আশ্চর্য সুন্দর সেই জলপ্রপাতে, যার নাম ’নাফাখুম’। রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহ এই নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে হঠাৎ করেই প্রায় ২৫-৩০ ফুট নিচে পতিত হয়ে প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত! সূর্যের আলোয় যেখানে নিত্য খেলা করে বর্ণিল রংধনু! আকাশে ৈতরি হয় হাজার রঙের আলোকচ্ছটা। মেঘের আড়ালে যখন সূর্য হাসে আলোর সে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাহাড়তলে। খরস্রোত নদীর জল সাই সাই করে ধেয়ে যায় কলকল শব্দে। ভয়ংকর সে নদীর সৌন্দর্য যেন আরো ভয়ংকর। যারা বিদেশের মাটিতে সুন্দরকে খুজে বেড়ান তাদের জন্য নাফাখুম চ্যালেঞ্জ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ দেশে এমন সুন্দর থাকতে পারে তা বিশ্বাস করাই মুশকিল। পাহাড়, নদী আর পাথুরে খাল দেখে মনে হবে যেন কোন এক ছবির পাতায় পাতায় হাটছি। অসাধারন সুন্দর, অসহ্য সুন্দর। পানির গমগম করে ঝড়ে পরার শব্দে চারদিক মুখরিত। বর্ষার সময় ঝর্নার আকার বড় হয়। আর শীতের দিনে তা ক্ষীন হয়ে যায়। তবে সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে নাফাখুমের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায়। উপর হতে আছড়ে পড়া পানির আঘাতে ঝর্নার চারিদিকে সৃষ্টি হয় ঘন কুয়াশার। উড়ে যাওয়া জলকনা বাষ্পের সাথে ভেসে ভেসে শরীরে এসে পড়ে। রোমাঞ্চকর সে অনুভূতি। একে বাংলার নায়াগ্রা বললে ভূল বলা হবে না। দুপাশের সবুজ পাহাড়ী বন আর পাথুরে ভুমি নাফাখুম ঝর্নাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা, করেছে আরো আকর্ষনীয়। পাথরের ফাকে ফাকে ছোপ ছোপ সবুজ ঘাসের থোকা সৌন্দর্যের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন।
বান্দরবন হতে ৭৯ কিমি. দুরে অবস্থিত থানচি। এটি একটি উপজেলা। সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত থানচি বাজার। এই সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রীর দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয় নৌকা বেঁয়ে। উপরে উঠা বলছি এই কারনে যে আসলেই নদীটা রেমাক্রী হতে থানচির দিকে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে এসেছে আর এই কারনে এখানে এত স্রোত। নদী কিছুদূর পর পর ১-২ ফুট এমন কি কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট পর্যন্ত ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে। প্রকৃতি এখানে এত সুন্দর আর নির্মল হতে পারে ভাবাই যায় না। নদীর দুপাশে উচু উচু পাহাড়। সবুজে মোড়ানো প্রতিটি পাহাড় যেন মেঘের কোলে শুয়ে আছে অবলিলায়। কোন কোন পাহাড় এতই উচু যে তার চূড়া ঢেকে আছে মেঘের আস্তরে। অসাধারন সে দৃশ্য। সবুজে ঘেরা সে পাহাড়ে হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায় দু একটি উপজাতী বসতঘর। পাহাড়ের ঢালুতে টিন আর বেড়ার ঘর গুলো দেখে মনে হবে যেন সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা কোন বিদেশী পর্যটন কেন্দ্র। কড়া সবুজের মাঝে মাটি রং এর ঘর গুলো যেন ক্যানভাসে আঁকা কোন ছবি। বিমূর্ত সে ছবি, অপার তার সৌন্দর্য। চারদিক সুনসান, নিরব, নিশব্দ কেবলই পানির হুমহুম শব্দ আর পাখির কিচির মিচির।
এখানে নদীগুলোর গভীরতা একেবারেই কম। কোথাও কোথাও পানির তলার পাথর দেখা যায়। কোথাও বা নদীর মাঝেই উচু হয়ে আছে পাথর। কিন্তু গভীরতা কম হলে কি হবে মারাত্মক স্রোত। একটু উনিশ বিশ হলেই সর্বনাশ। যেখানে নদী ঢালু হয়ে গেছে সেখানে প্রচন্ড স্রোত। গমগম করে নেমে যাচ্ছে পানির ঢল। এমন জায়গায় নৌকা প্রায় চলতেই পারে না। তাই নেমে হেটে যেতে হয়। যাত্রা পথে এমন ভাবে বেশ কয়েকবারই নেমে নেমে হেটে যেতে হয়। শীতকালে নদীতে পানি কম থাকে বলে এই উঠা নামার পরিমানটা অনেকবেশী থাকে। এই পথে যেতে যেতে আপনাকে পারি দিতে হবে তিন্দু ও বড় পাথর। তিন্দুতে একটি বিজিবি ক্যাম্প আছে। অসাধারন সুন্দর একটি স্থান তিন্দু। অনেকে নাফাখুম যাবার পথে থানচি না থেকে তিন্দুতে এসে রাত্রিযাপন করে। এখানে থাকার জন্য কিছু ঘর ভাড়া পাওয়া যায়।
তিন্দু হতে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই বড় পাথর। স্থানীয়রা একে রাজা পাথরও বলে থাকে এবং তারা বিশ্বাস করে যে এই রাজা পাথরকে সম্মান দেখাতে হয়, নতুবা দুর্ঘটনা ঘটে। এ কারনে এখানে এসে নিশ্চিত নেমে হেটে যেতে হয়। আসলে একটি বিশাল আকারের পাথর। পাশে আরো অনেকগুলো ছোট বড় পাথর নদীর ঠিক মাঝে পড়ে আছে। ধারনা করা হয় বহু বছর আগে ভুমিকম্পের কারনে পাশের পাহাড় হতে এই বিশাল আকারের পাথরের টুকরো গুলো নদীর মাঝে এসে পড়েছে। আর এ কারনে নদীর মুখ খুব ছোট হয়ে গেছে যার ফলে এখানে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে।
বড় পাথর হতে ঘন্টা খানেক সামনে এগিয়ে গেলেই রেমাক্রী বাজার। বলতে দ্বিধা নেই যে এই নদী ভ্রমনটা না থাকলে কেবল নাফাখুম দর্শনটা একেবারেই পানসে হয়ে যেতো। নদী পাহাড় আর আকাশের এমন সমন্বয় পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। রেমাক্রী বাজারের ঠিক কয়েকশ গজ আগে ছোট একটা খুম (ঝর্না) আছে। নাম রেমাক্রীখুম। এক কথায় অসাধারন। নাফাখুমের পানি রেমাক্রী খাল দিয়ে এসে এখানে সাঙ্গু নদীতে পরেছে। প্রায় ৪/৫ ফুট উচু হতে ধাপে ধাপে পানি সাঙ্গু নদীতে পরছে। দুচোখ জুড়িয়ে যাবার মত দৃশ্য। প্রচন্ড স্রোতে পানি গমগম শব্দ করে নিচে পরছে। দেখে মনে হবে যেন ক্যানভাসে আঁকা ছবি। এক একটি দৃশ্য চোখে পরবে আর গর্বে বুকটা ভরে যাবে। মনে হবে এই আমার বাংলাদেশ, এই আমার মা। সৃষ্টিকর্তা এখানে দুহাতে সুন্দরকে ঢেলে দিয়েছেন, যেখানে পা ফেলা যায় সেখানই সুন্দর। এ যেন সুন্দরের আবাসস্থল।
রেমাক্রী বাজারটা খুবই ছোট। বাজারের মাঝখানে বিশাল একটা উঠান আর চারদিকে দোকান। এগুলো তাদের ঘরও বটে। পেছনে থাকার ব্যবস্থা আর সামনে দোকান। বাজারের পাশে একটা রেষ্টহাউজ আছে। আর তার পাশেই বিজিবি ক্যাম্প। রেমাক্রী বাজার হতে নদীর কুল ধরে প্রায় ২/৩ ঘন্টা হাটতে হয় নাফাখুম যেতে। নদীর পাড়টা সমতল কিন্তু পাথুরে এবং বালুকাময়। কিন্তু এর কোন কিছুই আর চোখে পড়বে না। দুচোখ কেবল চারিপাশের সুন্দর দেখতে দেখতে বিহ্বল হয়ে যাবে। এখানে জনবসতী একেবারেই কম। মাঝে মাঝে দু একজন উপজাতীদেরকে মাছ ধরতে দেখা যায়। এই পথে যেতে ৩ বার বুক সমান গভীর নদী পার হতে হয়। দেখতে শান্ত পানি হলে কি হবে? ভয়ংকর স্রোত সে পানিতে। পা স্থির রাখা যায় না। জায়গামত পা ফেলতে না পারলে ভেসে যেতে হবে।
বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে এই যাত্রা পথের প্রতি মুহুর্তে। নদীর পাড় কখনো উচু নিচু পথ, পাহাড়ের কিনারা বেয়ে সামনে এগোনো, কখনো আবার টারজানের মত লতা ধরে ঝুলে ঝুলে নদী পার হওয়া, রিতিমত রোমাঞ্চরক ভ্রমন। পথে যেতে যেতে কমপক্ষে ১০/১২ টা ছোট খাটো ঝর্না চোখে পরবে যার পানি গিয়ে রেমাক্রী খালে পতিত হয়েছে। দীর্ঘ পথ হেটে ক্লান্ত শরীর বা পা সে পানিতে ভেজানোর সাথে সাথে সব ক্লান্তি দুর হয়ে যাবে নিমিষেই। এ যেন এক প্রাকৃতিক জল থেরাপি। নদীর কিনারা ধরে ধরে যখন হাটু পানি বা কোমর পানি দিয়ে এগিয়ে যাবার সময় মনে হবে যেন আমাজন নদী পারি দিচ্ছি কিংবা আনাকোন্ডা সিনেমার দৃশ্যে অভিনয় করছি, এই বুঝি আনাকোন্ডা এসে খপ করে ধরে ফেল্লো। দারুন সব অনুভুতি। আপনি পুলকিত না হয়ে পারবেন না।

ইতিহাস
মারমা ভাষায় খুম শব্দের অর্থ হচ্ছে ঝর্না বা জলপ্রপাত কিবাং জলপতন। এখানে মূলত খুম বলতে ঝর্নাকেই বোঝায়। রেমাক্রী নদী এখানে এসে হঠাৎ উপর হতে নিচে পতিত হয়ে একটি খুম বা ঝর্নার সৃষ্টি করেছে। এই নদীতে এক প্রকার মাছ পাওয়া যায় যার নাম নাফা মাছ। এরা স্রোতের বিপরীত দিকে চলার চেষ্টা করে। ঝর্নার এখানে নাফা মাছগুলো স্রোতের বিপরীত দিতে লাফ দিয়ে ঝর্না পার হতে চায়। আর এই সুযোগে উপজাতীয়রা সে মাছগুলোকে সহজেই জাল বা কাপড় দিয়ে ধরে। এই থেকেই এই ঝর্নার নাম হয়েছে নাফাখুম।

যেভাবে যেতে হবে
নাফাখুম যাবার জন্য একটিই পথ আপনার জন্য খোলা আছ। প্রথমেই আপনাকে যে কোন স্থান হতে গিয়ে পৌছতে হবে বান্দরবন। বান্দরবন হতে যেতে হবে থানচি। ২ ভাবে যেতে পারেন থানচি। বান্দরবন হতে চান্দের গাড়ী অথবা জীপ গাড়ী ভাড়া করে যেতে পারেন থানচি কিংবা বান্দরবন হতে সরাসরি পাবলিক বাসে করেও যেতে পারেন। পাবলিক বাসের ভাড়া কম কিন্তু বিরক্তকর ভ্রমন উপরন্তু আশে পাশের দৃশ্যাবলী খুব একটা উপভোগ করা যায় না। কিন্তু চান্দেরগাড়ী বা জীপ ভাড়া করে গেলে সে সমস্যা আর থাকবে না। তবে চান্দের গাড়ীর একটি সমস্যা আছে। বর্তমানে (সাময়িক সময়ের জন্য) বান্দরবন-থানচি রুটে ভরতপাড়া স্থানে রাস্তা ভাঙ্গা। বিজিবি কোন প্রকার গাড়ী চলাচল করতে দেয় না এই পথে। তাই আপনাকে চান্দেরগাড়ী ত্যাগ করে ওপার গিয়ে পাবলিক বাসে করে যেতে হবে থানচি। ভরতপাড়া হতে থানচির দুরত্ব ২৪ কিমি.। তবে পাবলিক বাসে গেলে এই সমস্যা নেই। কেননা টিকেটাধিকার বলে আপনি ওপাড়ে গিয় অন্যে একটি বাস প্রস্তুত পাবেন।
থানচি হতে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে রেমাক্রী। যাবার জন্য একমাত্র উপায় সাঙ্গু নদী হয়ে নৌকা দিয়ে যাওয়া। এখানে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া পাওয়া যায় যা আপনাকে সরাসরি রেমাক্রী নিয়ে যাবে ও নিয়ে আসবে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে থানচি ঘাটে নৌকাচালক সমিতি হতে নৌকা ভাড়া নিতে হবে। শুধু তাই নয় সাথে নিতে হবে গাইড। এটি বাধ্যতামূলক। এখানকার বিজিবি ক্যাম্পে গাইডদের একটি তালিকা আছে। সেখান হতে একজন গাইড নিতে হবে। সাথে কাগজে আপনাদের সব টুরিষ্টদের নাম, ঠিকানা, পিতার নাম, ফোন নাম্বার, মাঝির নাম ইত্যাদি জমা দিয়ে নাফাখুম যাবার অনুমতি নিতে হবে।
রেমাক্রী হতে নাফাখুম পর্যন্ত আর কোন বাহন আপনি পাবেন না। ওই পথটা আপনাকে হেটে যেতে হবে। এখানে পূর্বের গাইডকে রেখে আবার নতুন গাইড নিতে হবে। পূর্বের গাইড ও নৌকা মাঝি আপনার জন্য অপেক্ষা করবে এখানে। এখানেও আপনাকে নতুন করে কাগজে নাম ঠিকানা জমা দিয়ে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প হতে অনুমতি নিতে হবে। চাইলে রেমাক্রীতে রাত্রি যাপন করা যায়। তবে দিনে দিনেই নাফাখুম দেখে আবার থানচি ফিরে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভোর ৬ টায় থানচি হতে রওয়ানা হতে হবে। রেমাক্রী রাত্রিযাপন করে পরের দিন ভোরে নাফাখুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়াই উত্তম। তাতে পরিশ্রমটা অনেক কম হয়। দিনে দিনে ফিরে আসাটা রিতিমত কষ্টকর ও চ্যালেঞ্জিং।
রেমাক্রী বাজার হতে ২ ঘন্টা (খুব ভাল ভাবে হাটলে) হতে ৩ ঘন্টা (আয়েশ করে হাটলে) সময় লাগে নাফাখুম যেতে।

কোথায় থাকবেন
থানচিতে থাকার জন্য একটি সরকারী রেষ্টহাউজ আছে। তাছাড়া এখানকার নৌকা ঘাটে কয়েকটি থাকার ঘর আছে। এসব ঘরে থাকার জন্য কোন পয়সা দিতে হয় না। ৩ বেলা খেলে থাকা ফ্রি। পর্যটন মৌসুমে এসব থাকার জায়গাগুলো বুক হয়ে গেলে আপনি স্থানীয় চেয়াম্যান এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনি আপনাদের একটা না একটা ব্যবস্থা করে দেবেন।
কেউ যদি তিন্দু থাকতে চান তবে সেখানেও কিছূ উপজাতী ঘর ভাড়া পাবেন থাকার জন্য। রেমাক্রীতে বাজারে একটি রেষ্ট হাউজ আছে। এটা ভাড়া নিতে পারেন। তাছাড়া উপজাতীয়দের দোকানে/ঘরে খেলে থাকা ফ্রি।

অনুমিত খরচ
যাতায়াত ভাড়া
  • ঢাকা হতে বান্দরবন বাস ভাড়াঃ ৩৫০ টাকা
  • বান্দরবন-ভরতপাড়া চান্দের গাড়ীঃ ৩০০০ টাকা
  • বান্দরবন-থানচি পাবলিক বাস ভাড়াঃ ১৯০ টাকা
  • ভরতপাড়া – থানচি পাবলিক বাস ভাড়াঃ ৭৫ টাকা
  • থানচি – রেমাক্রী নৌকা ভাড়াঃ ৪৫০০
  • রেমাক্রীতে নৌকার অতিরিক্ত প্রতিরাতঃ ১৫০০ টাকা
থাকা
  • থানচি রেষ্ট হাউজঃ ৬০ টাকা প্রতিজন
  • রেমাক্রী রেষ্ট হাউজঃ ৬০ টাকা প্রতিজন
খাওয়া
  • থানচি বাজারঃ প্রতি বেলা আনুমানিক খাবার খরচ ৯০-১০০ টাকা
  • রেমাক্রী বাজরঃ প্রতি বেলা আনুমানিক খাবার খরচ ৯০-১০০ টাকা
গাইড
  • থানচি হতে রেমাক্রীঃ ৫০০ টাকা
  • রেমাক্রী হতে নাফাখুমঃ ৬০০ টাকা

করনীয়
  • খুব কম কাপড় নিতে হবে যেন ব্যাগ হালকা হয়।
  • ওডোমস ক্রিম নিতে হবে মশা হতে বাচার জন্য
  • হাটার জন্য ভাল গ্রিপ করে এমন প্লাষ্টিকের স্যান্ডেল পরতে হবে।তবে স্যান্ডেলটি আগেই পরে পায়ের সাথে মানিয়ে নিতে হবে।
  • থ্রি কোয়ার্টার বা শর্ট প্যান্ট পরে নিতে হবে।
  • রেমাক্রী হতে নাফাখুমের পথে যথেষ্ঠ পরিমান খাবার ও পানিয় নিয়ে নিতে হবে।
  • ফাষ্ট এইড ও চর্ট লাইট নিতে হব।
  • প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সাথে নিয়ে যাওয়া উত্তম
  • প্রত্যেক টুরিষ্টের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, বাসার ফোন, পেশা ইত্যাতি লিতে কমপক্ষে ১০ টি ফটোকপি করে নিয়ে যেতে হবে।

নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান

:::: রাঙ্গামাটি ::::







নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। এখানে পাহাড়ের কোল ঘেঁসে ঘুমিয়ে থাকে শান্ত জলের হ্রদ, নদী বয়ে চলে তার আপন মনে। সীমানার ওপাড়ে নীল আকাশ মিতালী করে হ্রদের সাথে, চুমু খায় পাহাড়ের বুকে। এখানে চলে পাহাড় নদী আর হ্রদের এক অপূর্ব মিলনমেলা যেখানে প্রকৃতি কথা বলে কবিতার ভাষায়। নদীর বাঁকে বাঁকে বাতাস সুর তোলে আপন মনে, গায় সুন্দরের গান। মুগ্ধ নয়নে শুধু চেয়ে থাকতে হয় অসহায় মানুষ হয়ে। চারিপাশ যেন পটুয়ার পটে আঁকা কোন জল রঙের ছবি। এখানে হাজার রঙের প্রজাপতি খেলা করে সবুজের মাঝে, রাতের আঁধারে দীপ জ্বেলে যায় লক্ষ কোটি জোনাকীর দল। কোন উপমাই যথেষ্ট নয় যতটা হলে বোঝানোয় যায় রাঙ্গামাটির অপরূপ সৌন্দর্য। এখানকার প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অদেখা এক ভূবন যেখান আপনার জন্য অপেক্ষা করছে নয়ানাভিরাম দৃশ্যপট।


পাখির কুহুতান, সবুজের মাখামাখি আর অসংখ্য নৃগোষ্ঠী এই জনপদকে দিয়েছে ভিন্ন এক রূপ। এখানে প্রায় ১৪টির মতো উপজাতী বসবাস করে। চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, বোম, খুমি, খেয়াং, পাংখোয়া, লুসাই, সুজ সাওতাল ও রাখাইন অন্যতম। নৃগোষ্ঠীর জীবন-যাপন ও সংগ্রাম আপনাকে যেমন মুগ্ধ করবে তেমনি মুগ্ধ করবে এর পর্যটন এলাকাগুলো। রাঙ্গামাটিতে ভ্রমন করার জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে কাপ্তাই লেক, পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, ঝুলন্ত ব্রিজ, পেদা টিংটিং, সুবলং ঝর্না, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমন অন্যতম ও অসাধারণ। । কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মানের ফলে সৃষ্টি হয় সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ। মূলত পানি বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য এই বাঁধ নির্মিত হয়। অসংখ্য পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা বিশাল কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহারে অনুভূতি এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এতে করে অনুভূত হবে রোমাঞ্চকর অনুভূতির । দেশীয় ইঞ্জিন নৌকা,লঞ্চ, স্পিডবোটে দিনভর নৌবিহার করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো আপনি চাইলে এই হ্রদ ঘুরতে ঘুরতেই দেখে ফেলতে পারবেন রাঙ্গামাটির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো। হ্রদটি ঘুরে দেখার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি ভাল নৌযানের। রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনি ট্রলার বা বোট ভাড়া করতে পারবেন, সারাদিনের জন্য ভাড়া করলে দেড় থেকে দু হাজার পর্যন্ত টাকা নিবে। একটা মাঝারি আকৃতির বোটে ত্রিশ জন বসা যায়। পর্যটন থেকেও বোট ভাড়া করা যায়, তবে রেট বেশি। ছোট বোটের ভাড়াও কম নয়। রিজার্ভ বাজার থেকে বোট বা ট্রলার ভাড়া করলে একটু কম দামে পাওয়া যাবে। এক হাজার থেকে বারোশর মধ্যে হয়ে যাবে। তবে পর্যটন বা অন্যান্য সংস্থার ট্রলারের মতো দেখতে সুন্দর না বলে অনেকে সেগুলো ভাড়া নিতে চান না। এগুলো ছাড়াও কেয়ারী সিন্দবাদ আছে যেটি রাঙ্গামাটি থেকে সুবলংয়ের উদ্দেশ্যে দিনে দুবার যাতায়াত করে। অবশ্য নিজের মতো করে ঘুরতে চাইলে সেগুলোতে না যাওয়াই ভাল। কারণ এই ট্রিপগুলো বুড়িছোঁয়ার মতো করে একেকটা জায়গায় যায় আর ফিরে আসে। এতে মন ভরে না, থাকে না স্বাধীনতা। সুতরাং একলা চলো নীতিই উত্তম।
কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমনের জন্য একটু ভোরে ভোরে রওয়ানা হওয়াই উত্তম। হ্রদের মাঝখান দিয়ে নৌভ্রমন আপনার মনে এমনই এক সুখস্মৃতি তৈরি করবে যা আপনি কখনোই ভূলতে পারবেন না। যে দিকে তাকাবেন কেবল পানি আর তার মাঝে মাঝে ছোট ছোট টিলা। লাল মাটির টিলাগুলোর গাঁয়ে সবুজের সমারোহ, যেন এগুলো ঢেকে আছে সবুজ কার্পেটে। অসহ্য সুন্দর যে দৃশ্য। কখনো ডানে কখনো বামে আবার কখনো বা মনে হবে সম্মুখে সীমাহীন পথ। এখানে জল, পাহাড় আর আপনি ছাড়া আর কিছুই নেই চারিদিকে। এ এক অসাধারন অনুভুতি। কখনো কখনো বেশ বড় বড় পাহাড় আপনার চোখে পড়বে। এর দৃষ্টিনন্দন শীলা খন্ড আপনার নজর কাড়বেই। মন চাইবে উড়াল দিয়ে চলে যাই সেখানে। চাইলে অবশ্য যেতেও পারেন। একটু কষ্টসাধ্য- এই আর কি। প্রকৃতি আর ভ্রমন পিপাষু মানুষ উভয়রই রয়েছে একটি নিজস্ব ভাষা। প্রকৃতির সাথে কথা বলতে বলতে কখনযে ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। এভাবে চলতে চলতে একে একে আপনি পাড়ি দেবেন কাপ্তাই হ্রদ, সুবলং ঝর্না, সুবলং বাজার, পেদা টিং টিং, রাজবাড়ী, রাজ বনবিহার, ঝুলন্ত সেতু আর পর্যটন মোলেট সহ অনেক কিছু। সময়ের আঁচড় পরবে ঘড়ির কাটায় কিন্তু তখনো আপনি অভূক্ত এক ভ্রমনপিয়াসী।
থাকার জন্য রাঙ্গামাটিতে সরকারী বেসরকারী অনেকগুলো হোলে ও রেষ্ট হাউজ রয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু বোডিং পাওয়া যায় থাকার জন্য। তবে বোডিংগুলো খুব একটা সুবিধার নয়। অনেকগুলো হোটেল মোটেল থাকলেও ৩/৪টি হোটেল উল্লেখযোগ্য।

পার্শ্ববর্তী দৃশ্যাবলী
সুবলং ঝরনা
রাঙ্গামাটির অন্যতম সুন্দর দর্শনীয় স্থান এটি। চমৎকার একটি জলপ্রপাত এই স্থানকে দিয়েছে ভিন্ন একটি চরিত্র। রাঙ্গামাটি শহর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে অবসথিত মনোরম এই ঝরনাটি। এ ঝর্নার রূপ আপনাকে মোটেও আশাহত করবে না। সময়টি যদি হয় বর্ষাকাল তবে আপনি সত্যিই ভাগ্যবান বলতে হবে। কেননা এই সময় ঝর্না হয়ে উঠে নবযৌবনা, সয়ম্বরা। অপলক দৃষ্টিতে সে ঝর্নার রূপ আপনি দেখবেন সম্মোহিত হয়। এই স্থানটি বেশ সাজানো গোছানো। ফুলের বাগান, উচু বসার স্থান এবং হাটার জন্য ব্রিজ ও রাস্তা আপনাকে বিমোহিত করবে। ঝর্নাস্নান কিংবা দর্শন শেষে আপনি সামনে এগিয়ে গেলে পাবেন সুবলং বাজার। হ্রদের তীরে অবস্থিত স্থানীয় এই বাজারে রয়েছে একটি সেনা ক্যাম্প। বাজারটি একেবারে ছোট নয়। এখানকার খাবার বেশ সুস্বাদু। দুপুরের খাবারটি চাইলে এখানে সেরে নিতে পারেন। হ্রদ থেকে ধরা মাছের ঝোল আর আলুভর্তা রসনা বিলাসের জন্য মন্দ নয়। তবে সাবধান- এই এলাকায় প্রায়শই বন্য হাতির হামলা হয়ে থাকে। তাই চোখ কান একটু খোলা রাখাই শ্রেয়।
রাজবাড়ি
রাঙ্গামাটি শহরেই অবসথিত রাজবাড়ি। চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও তার মা রানী আরতি রায় এ রাজবাড়িতে থাকেন বর্তমানে। চারদিকে হ্রদ বেষ্টিত এই রাজবাড়ি পুরনো হলেও দেখতে ও বেড়াতে ভীষন ভাল লাগে। রাজদরবার, কাচারি, সজ্জিত কামানসহ দেখার মতো অনেক কিছু আছে। রাজবাড়ীর নিরিবিলি পরিবেশ, সবুজ বাঁশের ঝাড় আর পাখির কলকাকলি আপনাকে মহুর্তের জন্য অঁচল করে দেবে। রাজবাড়ীর পাশেই উপজাতীয় নারীরা তাদের হাতে বুনা বস্ত্র সম্ভার নিয়ে বসে থাকে বিকিকিনির জন্য। এসব পন্য আপনার প্রয়োজনের পাশাপাশি মেটাবে রুচির তৃষ্ণা।
রাজবন বিহার
রাজবাড়ির পাশেই আন্তর্জাতিক খ্যাত এই বৌদ্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। এখানে অবস্থান করেন বৌদ্ব আর্য পুরুষ শ্রাবক বুদ্ধু সর্বজন পূজ্য শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাসহবির বনভান্তে। এই বৌদ্ব বিহারে প্রত্যেক বছরের কঠিন চীবর দানোৎসবে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। এছাড়া প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনাথী ও পুণ্যানর্থীর ভিড়ে মুখরিত থাকে রাজবন বিহার এলাকা। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বেশ কয়েকটি বৌদ্ব মন্দির, বিশ্রামগার, হাসপাতাল, তাবতিংস স্বর্গসহ অনেক কিছু রয়েছে দেখার মত।
ঝুলন্ত ব্রিজ ও পর্যটন মোটেল
রাঙ্গামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত সরকরি পর্যটন মোটেল। পর্যটকদের জন্য খুবই দৃষ্টিকাড়া ও আকর্ষনীয় স্থান এটি।
পর্যটন মোটেলেই অবস্থিত ঝুলন্ত ব্রিজটি, যা পর্যটন এলাকাকে আরও বেশি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দিত করেছে। সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে এটি। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষনের কারনে এবং এর নির্মানশৈলির কারনে ঝুলন্ত ব্রিজ আজ রাঙ্গামাটির নিদর্শন হয়ে দাড়িয়ে আছে।
পেদা টিং টিং
কাপ্তাই হ্রদের চারিদিকে কেবল পাহাড় আর হ্রদ, যেন প্রকৃতির মাঝে আপিন এক আগন্তুক মাত্র। বুনো প্রকৃতি ছাড়া আর কিছুই আশা করা যায় না এখানে। কিন্তু আপনি অবাক হবেন যখন চলতি পথে কোন একটি টিলার উপর দেখবেন “পেদা টিং টিং”। এমন এক পরিবেশে যেখানে আপনি এক গ্লাস খাবার পানি পাবেন না, সেখানে পেদা টিং টিং আপনার জন্য চা, কফি আর চিকেন ফ্রাই নিয়ে অপেক্ষা করছে। সত্যিই হতবাক করার মত ব্যাপার।
পেদা টিং টিং একটা চাকমা শব্দগুচ্ছ, যার অর্থ হচ্ছে পেট টান টান। অর্থাৎ মারাত্মকভাবে খাওয়ার পর পেটের যে টান টান অবস্থা থাকে, সেটাকেই বলা হয় পেদা টিং টিং। রাঙ্গামাটি শহর থেকে মাত্র ৪-৫ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই হ্রদের ভসমান একটি পাহাড়ে অবসথিত এই পর্যটন সংস্থা। এখানে রেস্তোরা, কটেজ, নৌবিহার ব্যবস্থা, সেগুন বাগান ও অসংখ্য বানর রয়েছে। ইচ্ছে করলে মনোজ্ঞ কোন অনুষ্ঠানও আয়োজন করা যায়। শুধু তাই নয় আপনি চাইলে রাত্রিযাপনও করতে পারবেন। এখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি কক্ষ সদৃশ ঘর। চাঁদনী রাতে এমন একটি পাহাড়ের উপর রাত্র যাপন- সত্যিই দুর্লব।
উপজাতীয় জাদুঘর
রাঙ্গামাটি শহরের প্রধান রাস্তার পাশেই এই জাদুঘরটি স্থাপিত হয়েছে। উপজাতীয় কৃষ্টি,সংস্কৃতি, জীবনধারার নানান নদর্শন ও ব্যিবহার্য জিনিসপত্র এখানে রাখা হয়েছে এখানে।
তবলছড়ি চাকমা বাজার
রাঙামাটি শহরে এটি হলো একটি প্রধান উপজাতীয় বাজার। সপ্তাহে বুধ এবং শনিবার এ বাজার বসে। উপজাতীয় কিশোর-কিশোরী, নারী এবং পুরুষরা এখানে আসে নানা ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে। পাহাড়ি মানুষের সঙ্গে মেশার, তাদের সঙ্গে কথা বলার এ হলো আপনার জন্য চমৎকার সুযোগ।
কাসালং
জলপথে যেতে হয় কাসালং। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে প্রতিদিন সকাল আটটায় কাসালংয়ের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চে যেতে যেতে নদীর দুই পাশের দৃশ্যাবলীও আপনাকে পুলকিত করবে। কাসালংয়ে ছোট-বড় বেশ কটি ঝরনা রয়েছে। এসব ঝরনার শব্দ আপনার কানে বৃষ্টির শব্দের মতো অনুভূত হবে। কাসালংয়ে মুরং, বম, বনজোগি, থিয়াং, পাডেনাই উপজাতীয়দের জীবনধারাও আপনাকে মুগ্ধ করবে।
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
১৩ হাজার একর এলাকা নিয়ে কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেঁষে কাপ্তাই উপজেলায় গড়ে উঠেছে ‘কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান’। সারি সারি পাহাড় আর প্রকৃতির অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে এখানে। এ বনভূমি বিচিত্র বন্যপ্রাণী ও পাখ-পাখালির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। বর্ষাকালে মেঘ পাহাড়ের মিতালী আর শীতে কুয়াশার লুকোচুরি- প্রকৃতির এমন কারুকাজ বেশ রোমঞ্চকর। বনের ভেতর সারি সারি সেগুন, জারুল, গামার আর কড়ই গাছের মাঝ বরাবর পায়ে হেঁটে চলা পর্যটকদের অফুরন্ত আনন্দে খোরাক। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে রয়েছে বন বিভাগের দু’টি বিশ্রামাগার। বিশ্রামাগারের চারপাশে নদী, পাহাড় আর সবুজের সহাবস্থান অপূর্ব সৌন্দর্যের আবহ তৈরি করেছে। মূলত জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণ এবং ইকো-ট্যুরিজমের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। রাঙামাটি জেলা সদর হতে এর দূরত্ব আনুমানিক ৩৫ কিলোমিটার। উদ্যানে যেতে হলে চট্টগ্রাম হতে সরাসরি কাপ্তাই যেতে হবে।

যেভাবে যেতে হবে

ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন স্থান হতে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। ঢাকা হতে বেশ কয়েকটি বাস প্রতিদিন ছেড়ে যায় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে। শ্যামলী, সায়েদাবাদ, কলাবাগান হতে প্রতিদিনই গ্রীনলাইন, এস.আলম, ইউনিক সার্ভিস বাসগুলো ছাড়ে। এগুলোর মাধ্যমে সরাসরি চলে যেতে পারেন রাঙ্গামাটি। 
অথবা ঢাকা বা অন্য জেলা হতে বাস, ট্রেনে কিংবা বিমানে করে যেতে পারেন চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম হতে অনেকগুলো বিলাশবহুল ও লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত। সেগুলোর মাধ্যমেও পৌছতে পারেন রাঙ্গামাটি। তবে সরাসরি বাস সার্ভিসই ঝামেলা ও ঝুক্কিমুক্ত।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য রাঙ্গামাটিতে সরকারী বেসরকারী অনেকগুলো হোটেল ও গেষ্ট হাউজ রয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু বোডিং পাওয়া যায় থাকার জন্য। বোডিংগুলোতে খরচ কিছুটা কম তবেথাকার জন্য খুব একটা সুবিধার নয়। নিন্মে কয়েকটি হোটেল এর বর্ননা দেয়া হলোঃ
(১) পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স
  • ১২ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রেতিটির ভাড়াঃ ১৭২৫ টাকা
  • ৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়াঃ ৮০৫ টাকা
    যোগযোগ
    ফোনঃ ০৩৫১-৬৩১২৬ (অফিস)
(২) হোটেল সুফিয়া
  • ২৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রেতিটির ভাড়াঃ ৯০০ টাকা (একক), ১২৫০ (দ্বৈত)
  • ৩৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়াঃ ৬০০ টাকা
    যোগাযোগ
    ০৩৫১-৬২১৪৫, ৬১১৭৪, ০১৫৫৩৪০৯১৪৯
(৩) হোটেল গ্রীন ক্যাসেল
  • ৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রেতিটির ভাড়াঃ ১১৫০ হতে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত
  • ১৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়াঃ ৭৫০ হতে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত
    যোগাযোগঃ
    ০৩৫১-৭১২১৪, ৬১২০০, ০১৭২৬-৫১১৫৩২, ০১৮১৫-৪৫৯১৪৬
এছাড়াও রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হোটেল যেমন * হোটেল জজ * হোটেল আল মোবা * হোটেল মাউন্টেন ভিউ * হোটেল ডিগনিটি * হোটেল সাফিয়া * হোটেল ড্রিমল্যান্ড ইত্যাদি

অনুমিত খরচ

ট্রলার ভাড়া
দেশীয় ইঞ্জিন নৌকায় রাঙ্গামাটি শহর হতে এই ঝরনা দেখে আসতে আসা- যাওয়াসহ সময় লাগে ২ ঘণ্টার মতো। ভাড়া ৩০০-৪০০ টাকা।
সারাদিন কাপ্তাই হ্রদ ঘুরতে আপনার ট্রলার ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা।

খাওয়া দাওয়া

রাঙ্গামাটি এসে স্থানীয় আদিবাসীদের খাবার না খেলে পুরো ভ্রমনটাই অপূর্ন থেকে যায়। তাই ইচ্ছে করলে এবং যদি কপাল ভাল হয় তবে আপনও স্বাদ নিতে পারেন আদিবাসীদের হরেক রকম খাবারের। এদের অনেকগুলো পদের মধ্যে কয়েকটি পদ খুবই ভিন্ন প্রকৃতির ও সুস্বাদু। আপনি যে কোন হেটেলেই এসব খাবার পাবেন না। যদি আদিবাসীদের সাথে সখ্যতা থাকে বা করে নিতে পারেন তবে এই খাবারের স্বাদ নেয়া আপনার জন্য সজহতর ও আকর্ষনীয় হবে।
  • বিগল বিচি
    বিগল বিচি দেখতে ছোট ছোট দানার মতো- হালকা করে তেলে ভাজা হয়। এমনিতে এর কোনো স্বাদ নেই। এটি মূলত খেতে হয় শুটকি মাছ ও কাঁচামরিচের ভর্তার সাথে। তখনই আসল স্বাদ পাওয়া যায়।
  • কচি বাঁশের তরকারী
    এটি একটি অসাধারণ আইটেম। রাঙ্গামাটি এসে এই খাবারটি হতে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না। কচি বাঁশের তরকারি। স্বাদ অসাধারণ! পুঁই বা অন্যান্য শাকের সাথে এটি রান্না করা যায়, অথবা ভাজি। যে ভাবেই খান না কেন এটি হবে আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। কচি বাঁশ খেতে খুবই নরম- মুখে দেওয়া মাত্র গলে যায়। আসলে এগুলোর স্বাদ বলে বুঝানো যাবে না! বুঝতে হলে খেতে হবে!
  • কেবাং
    এটি আসলে খাবার রান্নার একটি পদ্ধতি। শক্তসামর্থ বাঁশের খোলের ভেতর শূকর ভরে সেখানে তেল-মশলা দিয়ে বাঁশটিকে পোড়ানো বা ঝলসানো হয়েছে। তবে আপনি শুকর খেতে না চাইলে কাঁচকি বা অন্যান্য মাছ, মাংস ইত্যাদির কেবাং করে খেতে পারেন। এর স্বাদ এবং অভিজ্ঞতা আপনাকে স্মৃতির পাতা ঘুড়াবে সারাজীবন।
  • কাঁচকি ফ্রাই
    এটি অবশ্য আদিবাসী কোন খাবার নয়। তবে এর স্বাদ অতুলনীয়। সাধারণ পদ্ধতিতেই বড় বড় কাচকি মাছ তেলের উপর ভাজা হয়। গরম গরম খেতে ভীষন মজার খাবার এটি। রাঙ্গামাটির অনেক হোটেলেই এই খাবারটি পাবেন।


বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৫

:::: হামহাম ঝর্না ::::



কাঁচের মত স্বচ্ছ পানি পাহাড়ের শরীর বেঁয়ে আছড়ে পড়ছে বড় বড় পাথরের গায়ে, গুড়ি গুড়ি জলকনা আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি করছে কুয়াশার আভা। বুনোপাহাড়ের দেড়শ ফুট উপর হতে গড়িয়ে পড়া স্রোতধারা কলকল শব্দ করে এগিয়ে যাচ্ছে পাথরের পর পাথর কেটে সামনের দিকে তার গন্তব্যে। চারিপাশ গাছ গাছালি আর নাম না জানা হাজারো প্রজাতীর লাত পাতা ও লতা গুল্মে আচ্ছাদিত হয়ে আছে পাহাড়ী শরীর। স্রোতধারা সে লতাগুল্মকে ভেদ করে গড়িয়ে পড়ছে ভুমিতে। তৈরি করছে স্রোতস্বিনী জলধারা। সে যে কি এক বুনোপরিবেশ না দেখলে বিশ্বাস করানো সম্ভব নয়। শ্রাবনের প্রবল বর্ষনে যখন পুরো জঙ্গল ফিরে পায় তার চিরসবুজ, হয়ে উঠে সতেজ আর নবেযৌবনা । হামহাম ঝর্না তখন ফিরে পায় তার আদিরূপ। অপরুপ সৌন্দর্য। ঝর্নার সতেজতায় পাহাড়ী ঝিরিগুলো হয়ে উঠে কর্মচঞ্চল। সাঁই সাঁই করে ধেয়ে চলে ঝিরির জলরাশি। স্বচ্ছ জলস্রোত যখন পা গলিয়ে চলে যায় নদীর দিকে সে জলের কোমল পরশে শরীর জুড়িয়ে যায় মূহুর্তেই।






বলছি হামহাম ঝর্নার কথা। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিটের গহিন অরণ্যঘেরা দুর্গম পাহাড়ী এলাকার রযেছে অপূর্ব এই জলপ্রপাত। স্থানীয় বাসিন্দারা একে হামহাম ঝর্না বা অনেকে হাম্মাম ঝর্না বলে ডাকে। এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটক যারা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন কেবল তাদের জন্যই এই ঝর্না দর্শন। সরকারী কোন উদ্যোগ না থাকায় শুধুমাত্র উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রচার প্রচারনার অভাবে বাংলাদেশের অন্যতম এই জলপ্রপাতটি আজও রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। কেবলমাত্র দৃষ্টিনন্দন ঝর্না নয় পথের দুপাশের বুনো গাছের সজ্জা দৃষ্টি কেড়ে নেবে অনায়েসে। জারুল, চিকরাশি ও কদম গাছের ফাঁকে ফাঁকে রঙিন ডানা মেলে দেয় হাজারো প্রজাপতি। চশমা বানরের আনাগোনা ডুমুর গাছের শাখায় । চারদিকে গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক বাঁশবনে ভরপুর এ বনাঞ্চল। ডলু, মুলি, মিটিংগা, কালি ইত্যাদি অদ্ভুত নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ এ বাগানগুলোকে দিয়েছে ভিন্ন একরূপ। পাথুরে পাহাড়ের ঝিরি পথে হেঁটে যেতে যেতে সুমধুর পাখির কলরব আপনার মনকে ভাললাগার অনুভূতিতে ভরিয়ে দেবে। দূর থেকে কানে ভেসে আসবে বিপন্ন বনমানুষের ডাক। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর শুরুতে আপনার দু’চোখের সামনে ভেসে উঠবে পাহাড় থেকে ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা ভেসে উঠার অপূর্ব দৃশ্য। মনে হবে যেন ওই নয়নাভিরাম পাহাড় আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এভাবেই হাটতে হাটতে একসময় আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার কাঙ্খিত হামহাম জলপ্রপাতের খুব কাছাকাছি। কিছু দূর এগুলেই শুনতে পাবেন হামহাম জলপ্রপাতের শব্দ। কাছে গিয়ে দেখতে পাবেন প্রায় ১৩০ ফিট ওপর হতে আসা জলপ্রপাতের সেই অপূর্ব দৃশ্য । প্রবল ধারায় উপর হতে গড়িয়ে পরছে ঝর্নার পানি নিচে থাকা পাথরের উপর। পাথরের আঘাতে জলকনা বাতাসে মিলিয়ে গিয়ে তৈরি করছে কুয়াশা। চারিদিকে এক শীতল শান্ত পরিবেশ। ডানে বামে চোখ ফেরানোর উপায় নেই। কেবলই ইচ্ছে করবে তাকিয়ে থাকি সৃষ্টিকর্তার এই অনন্য সৃষ্টির জন্য। জঙ্গলে উল্লুক, বানর আর হাজার পাখির ডাকাডাকির সাথে ঝর্নার ঝড়ে পড়ার শব্দ মিলে মিশে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ। ক্ষনিকের জন্য ভূলেই যেতে হবে কোথায় আছি, কিভাবে আছি। উপরে আকাশ, চারিদিকে বন, পায়ের নিচে ঝিরির স্বচ্ছ জল আর সম্মুখে অপরূপ ঝর্না। নিজেকে না হারিয়ে আর কি কোন উপায় আছে?
প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর বর্ননা যতটা সুন্দর ও লোভনীয় যাত্রাপথ কিন্তু ততটা নয়। উচু নিচু পাহাড়া আর টিলা, বুনো জঙ্গল, পাথুরে আর কদর্মাক্ত পথ, কোথাও হাটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান ঝিরিপানি। শুধু তাই নয় এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে আপনার প্রবল শত্রু হিসেবে পেয়ে যাবেন অসংখ্য বন্য মশা মাছি এবং রক্তচোষা জোক। এই পথ পাড়ি দিয়েছে অথচ কেউ জোকের কবলে পড়েনি এমনটি ভাবা স্বপ্নবিলাশ। পাহাড়ী পথ মারাতে গিয়ে আপনাকে ঘাম ঝড়াতে হবে, পরিশ্রান্ত হতে হবে, কখনো পিছুহটতে মন চাইবে। খাদ্য আর পানীয়র অভাব আপনাকে অসহায় করে তুলতে পারে। তারপরও সৌন্দর্য পিপাষুদের অদম্য ইচ্ছার কাছে এইসবের কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা।
হামহাম যাবার জন্য সাথে একজন গাইড নিয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক। কারন প্রথমবার যারা যাবেন তাদের জন্য রাস্তা ভুল করাই স্বাভাবিক। কলাবন গিয়ে রামুজি নামে একজন গাইড পাবেন উনাকে সাথে নিয়ে যেতে পারেন। প্রয়োজন লাগলে রামুজির সাথে আরও ২/১ জন গাইড নিতে পারেন ব্যাগ/খাবার বহনের জন্য । গাইডদেরকে প্রতিজনে ১৫০-২০০ টাকা দিলেই হবে । রামুজিকে না পেলে অন্য কারো সাথে কথা বলে চালাক চতুর দেখে কাউকে নিয়ে নবেন। ট্রাকিং করার সময় সবার হাতে একটি বাশ বা লাঠি নিয়ে নিবেন। এটি আপনার ভারসাম্য রক্ষা করতে, হাটত এবং সাপ বা অন্যান্য বন্যপ্রাণী হতে নিরাপদ রাখবে। সাথে সরিষার তেল আর লবণ নিয়ে নিবেন । জোকে ধরলে লবন দিয়ে কোন কিছু দিয়ে ফেলে দিবেন। দুপুরে খাবার জন্য হালকা শুকনা খাবার নিয়ে যাবেন। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডেটল, নাপা ,তুলা এগুলো নিয়ে নিতে পারেন। থ্রিকোয়াটার্র টাইপের প্যান্ট আর টিশার্ট পরে যাবেন জুতা হিসেবে কেডসের তুলনায় প্লাস্টিকের স্যান্ডেল বেশ কাজে দেয়। নাজুক টাইপের মেয়েদের এই রাস্তাতে না নেওয়াই ভালো। বর্ষাকালে ঝর্নার প্রকৃতরূপ টা দেখা যায়। তবে সেক্ষেত্রে যাবার রাস্তায় কষ্টও বেশী হবে। শীতকালে রাস্তায় তেমন পানি থাকেনা বলে যাওয়াটা একটু সহজ। কিন্তু শীতে অধিকাংশ ঝরনাতেই একদম পানি থাকে না। সেটা দেখাও খুব একটা সুখকর নয়। সুতরাং কষ্ট হলেও বর্ষাকালেই যাওয়া উচিত।
হামহাম ঝর্নাস্থলে পৌছে খুব বেশীক্ষন উপেভাগ করার উপায় নেই। কেননা সেখানে বেশীক্ষন অবস্থানের কারলে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে পাহাড়ে ঘনকালো অন্ধকারে রাস্তা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা শতভাগ। অপরদিকে বন্যপ্রাণীদের আক্রমনেরও শিকার হতে পারেন। ঢালু ও পিচ্ছিল পাহাড়ী পথ বেয়ে উপরে ওঠা কষ্ট হলেও সহজ, কিন্তু পাহাড় হতে নিচে নেমে আসা খুবই বিপজ্জনক ও কঠিন। তাই ঝিরি পথে এসে সবাইকে কাছাকাছি থেকে খুবই সন্তর্পনে ট্রেকিং শুরু করতে হবে। প্রায় সাড়ে চারঘন্টা পর আপনি ফিরে আসবেন সেই কলাবনে। অতঃপর সেখানে আদিবাসী বস্তিতে রাত্রিযাপন নতুবা ঘরে ফেরার পালা।

ইতিহাস
এখানকার আদিবাসীরা পানি পতনের জলস্রোতকে হামহাম বলে। সে থেকেই এই ঝর্নাটির নাম হয় হামহাম। অনেকে একে চিতা ঝর্না বলেও ডাকে।

পার্শ্ববর্তী দৃশ্যাবলী
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান




এটি শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বনবিভাগ কতর্ৃক ঘোষিত একটি চমৎকার পর্যটন এলাকা।

যেভাবে যেতে হবে
প্রথমেই আপনাকে যেকোন স্থান হতে গিয়ে পৌছতে হবে সিলেট, শ্রেীমঙ্গল কিংবা সরাসরি মৌলভীবাজার। সেখান হতে কমলগঞ্জ। ট্রেনে করে আপনি যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল। সেখান থেকে জিপ রিজার্ভ করে কলাবনপাড়া। মৌলভীবাজার হয়ে যেতে চাইলে প্রথমেই যেতে হবে কমলগঞ্জ। এটি মৌলভীবাজারের একটি উপজেলা। যাই হোক যোকোন ভাবেই আপনি পৌছে যেতে পারেন কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জ হতে আদমপুর বাজার পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে ১০ টাকা। সেখান থেকে ২০০ থেকে ২৫০টাকা ভাড়ায় সিএনজি যোগে আপনি অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারেন আদিবাসী বস্তি তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবন বস্তি পর্যন্ত । সেখান থেকে আরও প্রায় ৮ কিঃমিঃ পথ পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে কাংখিত সেই হামহাম জলপ্রপাতের। যেভাবেই যান না কেন গহীন অরন্যে প্রবেশের পূর্বে তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবন বস্তির আদিবাসীদের সাহায্য নিয়ে আপনাকে ট্রেকিং করতে নামতে হবে। প্রায় ৮ কিমি. দুর্গম পাহাড়ের গায়ে হামহাম জলপ্রপাত যাওয়ার সহজ রাস্তাটি স্থানীয় লোকেরা আপনাকে বাতলে দেবে। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা ঝিরি পথে ট্রেকিং করা খুবই কঠিন এবং কষ্টের। বড় বড় পাথরের খণ্ড খুবই পিচ্ছিল, ডানে-বামে তাকালেই বিপদ। তাই ট্রেকিং করার সময় একটি করে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে পাহাড়ী এই পথ পাড়ি দিতে হবে।

কোথায় থাকবেন
প্রথমে শ্রীমঙ্গলের কোন একটি হোটেল বা গেষ্ট হাউজে ওঠাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এখানে রাত্রি যাপন করে সকালে চলে যেতে হবে কলাবনপাড়ায়। সেখানে আপনি চাইলে তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবন আদিবাসী বস্তিতে আস্তানা গাড়তে পারেন। অথবা আদিবাসীদের ঘরেও থাকতে পারেন। তারা এ ব্যপারে আপনাকে সহায়তা করবে। পর্যটকদের প্রতি তারা খুবই বন্ধুবৎসল। এখানে থাকার জন্য খুব একটা উন্নত ব্যবস্থা নেই। তবে মাথা গোঁজার জন্য একটা জায়গা অন্তত পেয়ে যাবেন।
ঝর্না দেখে ফেরার পর আপনি এতই ক্লান্ত থাকবেন যে ঐ মুহুর্তে আর শ্রীমঙ্গল ফিরতে ইচ্ছে করবে না কিংবা ফেরার হয়তো উপায়ও থাকবে না। সুতরাং কলাবন আদিবাসী বস্থিতে থাকাটাই সবচাইতে উত্তেম হবে। 
তাছাড়া জীবন চলার পথে এমন একটি রাত্রিযাপন হয়তো আর কখনো উপভোগ নাও করতে পারেন। সুতরাং এই স্বাদ হতে বঞ্চিত হবেন না।

অনুমিত খরচ
যাতায়াত
কমলগঞ্জ-আদমপুর বাজার পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে ১০ টাকা। সেখান থেকে ২০০ থেকে ২৫০টাকা ভাড়ায় সিএনজি যোগে আপনি অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারেন আদিবাসী বস্তি তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবন বস্তি পর্যন্ত ।
গাইড
গাইড বুঝে ভাড়া ভিন্ন ভিন্ন হেয় থাকে। অভিজ্ঞ গাইড হলে ২০০/২৫০ টাকা চাইেব পথ প্রদর্শনের জন্য।

:::: খাগড়াছড়ি ও খাগড়াছড়ি থেকে যাতায়াত সুবিধার জন্য রাঙামাটির কিছু অংশ ::::













খাগড়াছড়ি ২৬৯৯.৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পার্বত্য চট্রগ্রামের একটি জেলা। যার আটটি উপজেলা ও নয়টি থানা। উপজেলা গুলো হলো খাগড়াছড়ি সদর, মহালছড়ি,মাটি রাঙা ,দীঘিনালা , মানিকছড়ি, পানছড়ি ,লক্ষীছড়ি ও রামগড়। খাগড়াছড়ির প্রধান নদী হলো চেঙ্গী , মাইনী ও কাসালং। এছাড়াও উল্লেখ যোগ্য নদী গুলো ফেনী , গঙ্গারাম,মাসালং ,চিংড়ি ও হালদা। চেঙ্গী খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী নদী। চেঙ্গী কর্ণফুলীর শাখা নদী। কর্ণফুলী ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খাগড়াছড়ির দুরত্ব ২৭৫ কিঃ মিঃ। ঢাকা চট্রগ্রাম রোডের বারৈয়ার হাট থেকে হাতের বামে পাহাড়ী আঁকা বাঁকা পথ হয়ে খাগড়াছড়ি যেতে হয়। নল খাগড়া ও  ছড়ার সংমিশ্রনে  এ অঞ্চলের নাম হয় খাগড়াছড়ি।


যা দেখবেনঃ

আলুটিলা ও গুহাঃ




আলুটিলা  ঢাকা / চট্রগ্রাম – খাগড়াছড়ি রাস্তার পাশে খাগড়াছড়ি শহরের আগে হাতের বামে অবস্থিত। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে যার উচ্চতা ৩০০০ ফুট । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্বের সময় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে মানুষ এই পাহাড় থেকে বুনো আলু সংগ্রহ করে খেতো। তখন থেকে এর নাম হয় আলুটিলা । আলুটিলা গুহাকে দেবতা গুহাও বলে । গুহার দৈর্ঘ্য ২৫০ ফুট যা পার হতে ১০-১৫ মিনিটের মতো সময় লাগে। গুহায় ঢুকতে জনপ্রতি ৫ টাকার টিকেট লাগবে। আর মশালও পাবেন ৫ টাকায় । ভালহয় যদি টর্চ নিয়ে যান। গুহার ভিতরে ভাল করে দেখে পা ফেলবেন । অহেতুক তাড়াহুড়া করবেন না।

রিসাংঝর্ণাঃ



ঢাকা / চট্রগ্রাম – খাগড়াছড়ি রাস্তার ১০ কিঃ মিঃ পূর্বে  রিসাং বা মেম্বার পাড়া বাস ষ্ট্যান্ডে নামতে হবে। বাস ষ্ট্যান্ড থেকে ইট সলিং ধরে ২ কিঃ মিঃ এর মতো এসে হাতের বামে একটু গিয়ে সিড়ি ধরে নীচে নামলেই রিসাং ঝর্ণা পাবেন। পাহাড়ি পথেও আসতে পারবেন। বাস ষ্ট্যান্ড থেকে এই ২ কিঃ মিঃ রাস্তা কিন্তু আপনাকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে যদি না আপনি আমাদের দেশের আলোকে বড় সড় কিছু বা আপনার বড় সড় কেউ না থাকে । বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি । তার মানে আমি গাড়ি দিয়ে যাইনি , আমাকে পায়ে হেঁটেই যেতে হয়েছে । যাবার সময় অনেককে গাড়ীতে করে যেতে দেখেছি । সেই থেকে বলা । এটি মাটিরাঙ্গা ইউনিয়নে পরেছে যা ২০০৩ সালে পর্যটকদের নজরে আসে । যার উচ্চতা ১০০ ফুট এর মত । এর মালিক রবীন্দ্র টিপরা । তিনি ১৯৮৯ সালে সরকার থেকে ১০ একর জমি লিজ নেন ।

অপু ঝর্ণাঃ
রিসাং ও অপু ঝর্ণার রাস্তা একই । রিসাং বা মেম্বার পাড়া বাস ষ্ট্যান্ড থেকে ইট সলিং ধরে সোজা এসে বামে রিসাং এর দিকে না গিয়ে ২০ গজের মত সামনে এসে বাম দিকে তাকালে ১৫ গজ দূরে একটি তেঁতুল গাছ দেখা যাবে । তেঁতুল গাছের পাশ দিয়ে নিচে ঝিরিতে নেমে ঝিরি ধরে ১৫ মিনিটের মত বাম দিকে গেলে ঝিরির মাথায় অপু ঝর্ণা পাবেন । বর্ষা কালে দড়ি ছাড়া এ পথে নামাটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ । তাই একটু সাবধানে নামবেন । অন্য আরেকটি পথে ঝর্ণায় যেতে পারবেন । ইট সলিং ধরে সোঁজা এসে রিসাং বা তেঁতুল গাছের দিকে না গিয়ে সলিং এর শেষ মাথায় এসে হাতের ডানে নেমে যাবেন । ১৫ মিনিটের মত গেলে ঝিরি পাবেন । ঝিরি ধরে বাম দিকে গেলে ঝিরির শেষ মাথায় অপু ঝর্ণা পাবেন । রিসাং এর পাশে কিছু দোকান আছে , দোকানের কাউকে ১০০ টাকা দিলেই ওরা আপনাকে ঝর্ণা দেখিয়ে আনবে ।

দেবতা পুকুরঃ

যা মহাতীর্থ  নুনছড়ি মাতাই পুখরী দেবতা পুকুর নামে পরিচিত । যা সমূদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত । খাগড়াছড়ি শহর থেকে ১৫ কিঃ মিঃ দক্ষিনে মহালছড়ি রোডে ২৫৭ নং নুন ছড়ি মৌজায় অবস্থিত । মূল সড়ক থেকে মাইচ ছড়ি স্কুল হয়ে ৬ কিঃ মিঃ এর মতো যেতে হয় । ২ একর জমি জুড়ে এর অবস্থান । এটি ত্রিপুরা জাতির তীর্থ স্থান । পাশে একটি মন্দির আছে । নুন ছড়ি ছড়াটি আলুটিলা পর্বত শ্রেণী থেকে পরেছে । আগে সুন্দর এই ঝিরিটি হেঁটে পার হয়ে যেতে হতো । এখন ঝিরির উপর কালভার্ট তৈরী করা হয়েছে । কালভার্টের আগের গ্রাম থেকে পথ দেখানোর জন্য কাউকে নিয়ে যেতে পারেন । সাথে খাবার পানি নিতে ভুলবেন না ।

নিউজিল্যান্ডঃ


শহর থেকে ১.৫ কিঃ মিঃ দক্ষিনে পানখাই পাড়ার পাশে অবস্থিত । সি এন জি বা অটোতে করে যেতে পারবেন। আপনি সত্যিকারের নিউজিল্যান্ড না গিয়েও এখানে বসে তার সৌন্দর্য্য উপলব্দি করতে পারবেন।

খাগড়াপুর চার্চঃ
শহরের পাশেই অবস্থিত ।

য়ংড বৌদ্ধ বিহারঃ
শহরের কাছেই পৌর বাজারের দক্ষিনে অবস্থিত । যা ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ।

লক্ষী-নারায়ণ মন্দিরঃ
পৌর বাজারে অবস্থিত ।

ফুলকলি হাতির কবরঃ
ফুলকলি তৎকালীন জেলা প্রশাসকের হাতি ছিল । ১৯৯০ সালে আলুটিলা পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে আহত অবস্থায় মারা যায় । জিরো পয়েন্টের পাশেই এর কবর ।

মং রাজার বাড়িঃ
শহর থেকে ২ কিঃ মিঃ দূরে মহালছড়ি রোডের  পাশেই অবস্থিত । বর্তমান রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী । যিনি নবম রাজা । অষ্টম রাজা পাইলাপ্রু চৌধুরী ২০০৮ সালে রামগড়ে বাস দূর্ঘটনায় নিহত হন ।

১০ নং বটগাছঃ
এই বট গাছের  বয়স১০০ বছরের বেশী । মাটিরাঙ্গা ইউনিয়নের ১০ নং  মৌজায় এর অবস্থান বলেএকে ১০ নং বট গাছও বলে । শহর থেকে ২২ কিঃমিঃ  পশ্চিমে অবস্থিত । বাসেমাটিরাঙ্গা এসে মোটর সাইকেলে এখানে যেতে পারবেন ।

মানিকছড়ি মং রাজার বাড়িঃ
জেলা শহর থেকে ৩৬  কিঃ মিঃ দক্ষিন - পশ্চিমে মহালছড়ি রোডে অবস্থিত ।

মহামনী বৌদ্ধ বিহারঃ
মানিকছড়ি মং রাজার বাড়ির পাশেই মহামনী টিলার উপর বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত । রাজা নেপ্রু শিং এটি তেরী করেন ।

ভাবণা কেন্দ্রঃ
মানিকছড়িতে অবস্থিত । বিশ্ব শান্তি স্মৃতিদাম ভাবনা কেন্দ্র । এখানে ৩২ টি মূর্তি আছে ।

৮২ টিলাঃ
মাটিরাঙ্গা থেকে দক্ষিনে তবলছড়ি এলাকায় অবস্থিত । একবার তুলা চাষ করতে গিয়ে ৮২ মণ তুলা পায়। সেই থেকে নাম করন হয় ৮২ টিলা । পাশে একটি লেক আছে ।

শহীদ মিনারঃ
রামগড় বর্ডারের পাশে ২০০৪ সালে এটি তেরী করা হয় ।

দীঘিনালা বন বিহারঃ
দীঘিনালা বাজার থেকে সি এন জি বা অটোতে করে যেতে পারবেন । ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগবে । ১৮ একর জমির উপর এর অবস্থান । বনভন্তে ১৯৬২ সালে এখানে আসেন । উনি১২ বছর এখানে সাধনা করেছেন । 

অরণ্য কুটিরঃ
জেলা শহর থেকে ৩০ কিঃ মিঃ উত্তরে পানছড়ি শান্তিপুর অরন্য কুটির অবস্থিত । যা ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় । খাগড়াছড়ি শহর থেকে চাঁদের গাড়ী বা সি এন জি রিজার্ভ নিয়ে যেতে পারবেন । এখানে গৌতম বুদ্ধের অনেক বড় একটি মূর্তি আছে।

ব্যারেজওয়াটার ড্যামঃ
খাগড়াছড়ি শহর থেকে পানছড়ি শান্তিপুর অরন্য কুটির যেতে এটি দেখতে পারবেন ।

ঝুলন্ত ব্রীজঃ
এটি দীঘিনালা উপজেলায় অবস্থিত । খাগড়াছড়ি থেকে  এটির দুরত্ব ২৪ কিঃমিঃ । মাইনি নদীর উপর ১৯৯০ সালে এটি তৈরী করা হয় । দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প পার হয়ে কাওয়া খালী বাজার থেকে হাতের ডানে ২০ মিনিটের মত গেলে এটি দেখা যাবে ।

মারিষ্যাঃ
খাগড়াছড়ি শহর থেকে বাস বা চাঁদের গাড়ীতে যেতে পারবেন ।

তৈদুছড়াশিবছড়ি ঝর্ণা ১ঃ 
ঝর্ণার উপরের ধাপ থেকে নাম করন করা হয় । যাতায়াত সুবিধা ও বহুল পরিচিতির কারণে নীচের ধাপকেই এক লিখলাম । দীঘিনালা বাজার  থেকে ২৫ মিনিটের মত গাড়ীতে গিয়ে হেঁটে নদী পার হয়ে যাওয়া আসা সহ মোট ৬ ঘন্টার  ট্রেকিং এ তৈদুছড়া ১ ও ২ ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন । এটি মূলত ঝিরি ট্রেইল তাই একটু সাবধানে পা ফেলতে হবে ।

তৈদুছড়াশিবছড়ি ঝর্ণা  
দীঘিনালা বাজার থেকে ২৫ মিনিটের মত গাড়ীতে গিয়ে  হেঁটে নদী পার হয়ে যাওয়া আসা সহ মোট ৬ ঘন্টার  ট্রেকিং এ তৈদুছড়া ১ ও ২ ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন । এটি মূলত ঝিরি ট্রেইল তাই একটু সাবধানে পা ফেলতে হবে । তৈদুছড়া ১ নং ঝর্ণা থেকে ৩ টি উপায়ে ২ নং ঝর্ণা যেতে পারবেন । ১) মূল ঝিরি ধরে আসার সময়  হাতের বামে  এর দিকে না এসে সোজা ২০ মিনিটের মত গিয়ে বামে পাহাড়ী পথে যাওয়া যাবে । এই পথে কেউ যায় না বললেই চলে । তাই পাহাড়ে বড় বড় ছন জাতীয় গাছের কারনে পথ হারানো স্বাভাবিক ব্যাপার । আমরা পথ হারিয়ে ফেলি । এই পথে না যাওয়াই ভাল । ২) তৈদুছড়া এক ঝর্ণার সাথে লাগানো ডান পাশ দিয়ে খাড়া উপরে উঠা যায় । বর্ষা কালে দড়ি ছাড়া এই পথটা কিছুটা বিপদজনক ।  ৩) ঝর্ণা থেকে ২৫ গজ আগে হাতের ডানে পাহাড়ে উঠে গেছে এই পথটি সব  চেয়ে ভাল । আমরা এই পথে নেমেছি ।

সিলাছড়ি গুহাঃ
এটি লক্ষীছড়ি উপজেলায় অবস্থিত ।

হাজা ছড়াশুকনো ছড়া / থাংঝাং ঝর্ণাঃ
দীঘিনালা সাজেক রোডের ১০ নং আর্মি ক্যাম্প পার হয়ে হাতের বামে ১৫ মিনিটের মত হেঁটে গেলে এটি দেখা যাবে । দীঘিনালা সাজেক রোডে ১২ কিঃমিঃ এর মত যেতে হবে । পথে ঝর্ণায় যাবার দিক নির্দেশক বোর্ড আছে ।

সিজুকনন্দরাম ঝর্ণা  :
এটি রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়নের নন্দরামে অবস্থিত । দীঘিনালা সাজেক রোডের নন্দরাম গ্রাম থেকে হাতের ডানে পাহাড়ী ও ঝিরি পথে ৬-৭ ঘন্টা ট্রেকিং করে সিজুক ১ ও ২ ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন । নন্দরাম দিয়ে ঢুকলে অন্য পথ দিয়ে ফিরবেন তাতে দুটো পথই দেখা হবে । বর্ষার সময়  সিজুক ১ ঝর্ণায় যেতে কিছু পথ কোমর থেকে বুক সমান পানির মধ্য দিয়ে যেতে হবে । এই সময়ে একটু আস্তে আস্তে পা টেনে হাঁটতে হবে, না হলে ঝিরির মধ্যে ডুবন্ত বাঁশ বা গাছের ডালে খোঁচা লেগে ব্যাথা পেতে পারেন । আর ডুবন্ত বাঁশের টুকরো থেকে চিংড়ি মাছ ধরার আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না । ঝর্ণায় যেতে  নন্দরাম গ্রাম থেকে অবশ্যই একজন গাইড নিবেন । ছবি ,এ্যল্টন ও এ্যলবার্ট নামের গাইড আছে নন্দরাম গ্রামে ওদের যে কাউকে অবশ্যই সাথে নিবেন । খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা থেকে চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে যেতে হবে ।

সিজুকনন্দরাম ঝর্ণা  :
এটি রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়নের নন্দরামে অবস্থিত । দীঘিনালা সাজেক রোডের নন্দরাম গ্রাম থেকে হাতের ডানে পাহাড়ী ও ঝিরি পথে ৬-৭ ঘন্টা ট্রেকিং করে সিজুক ১ ও ২ ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন ।

সাজেক ভ্যালী :











প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যের আঁধার আমাদের মাতৃভূমি রূপসী বাংলা । রূপের অপার সৌন্দর্য্যের সাঁজে সেঁজে আছে বাংলা মা। আমরা সৌন্দর্য্যের খোঁজে ছুটে বেড়াই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । কিন্তু একবারও কিভেবে দেখেছি আমাদের দেশের সৌন্দর্য্য তাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয় । আমরা বিভিন্ন দেশের গ্রীন ভ্যালী দেখতে যাই কিন্তু ঢাকা থেকে মাত্র ৭/৮ ঘণ্টা গাড়ি পথে পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার সাজেক ভ্যালী টা আমরা কজনই বা দেখেছি । হাতে দুই দিন সময় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন এ সৌন্দর্য্য অবলোকন করার জন্য, যা আপনার সুন্দর একটি স্মৃতি হয়ে কল্পনায় গেঁথে থাকবে ।  সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত । সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন । যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা , দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু ,পূর্বে ভারতের মিজোরাম , পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা । সাজেক রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে । রাঙামাটি থেকে নৌ পথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক আসা যায় । খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব৭০ কিলোমিটার । আর দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার । বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার । খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয় । পরে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প । যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতেহবে । তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে । পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার । বাজার পার হলে পরবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যারউচ্চতা ১৮০০ ফুট । এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরারাও বাসকরে । ১৮৮৫ সালে এই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় । এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই । রুইলুইপাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবেন সাজেক । সাজেকের বিজিবি ক্যাম্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিজিবি ক্যাম্প । এখানে হেলিপ্যাড আছে । সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া । এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই । কংলক পাড়াথেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে । সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর  কোন ক্যাম্প নাথাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে কংলক পাড়ায় মাঝে মাঝে যাওয়ার অনুমতি দেয় না । ফেরার সময় হাজাছড়া ঝর্ণা , দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ওদীঘিনালা বনবিহার দেখে আসতে পারেন । একদিনে এই সব গুলো দেখতে হলে যত তারাতারি সম্ভব বেড়িয়ে পড়বেন। খাগড়াছড়ির সিস্টেম রেস্তোরায় ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে ভুলবেননা । খাগড়াছড়ি থেকে জীপগাড়ি (লোকাল নাম চাঁন্দের গাড়ি) রিজার্ভ নিয়ে একদিনে সাজেক ভ্যালী ঘুরে আসতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫০০০-৬০০০ টাকা । এক গাড়িতে ১৫ জন বসতে পারবেন । লোক কম হলে শহর থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন । ভাড়া ৩০০০ টাকার মতো নিবে । অথবা খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন । বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতি ভাড়া ১০০ টাকা । দীঘিনালা থেকে ১০০০-১২০০ টাকায় মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ঘুরে আসতে পারবেন । ফেরার সময় অবশ্যই সন্ধ্যার আগে আপনাকে বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প পার হতে হবে। তা না হলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে । ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন ।

রুইলুই পাড়াঃ
এটি দীঘিনালা সাজেক রোডেই পরবে ।রাস্তার দুই পাশেই পাড়াটি বিস্তৃত । যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট । এর প্রবীণজনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরাও বাস করে । ১৮৮৫ সালে এই পাড়াপ্রতিষ্ঠিত হয় । এর হেড ম্যান লাল থাংগা লুসাই । একটু সময় নেমে পাড়াটি দেখে যেতেপারেন ।

কংলক পাড়াঃ
সাজেকের শেষ গ্রাম কংলক পাড়া । সাজেকবিজিবি ক্যাম্প পার হয়ে কংলক পাড়ায় যেতে হয় । এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া । এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই । কংলক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । যেখান থেকে কর্ণফুলী নদী উৎপন্ন হয়েছে । সাজেক বিজিবি ক্যাম্প এর পর আর  কোন ক্যাম্প না থাকায় নিরাপত্তা জনিত কারনে মাঝেমাঝে  কংলক পাড়ায় যাওয়ার অনুমতি দেয় না ।

আমরা সাধারণত ২/৩ দিন সময় নিয়ে বের হই । তখন মূল স্থান গুলোই বেশী প্রাধান্য পায়  । ঝর্ণার মূল সৌন্দর্য্য দেখতে হলে বর্ষা মৌসুমে যাওয়াই ভাল । এই এলাকা গুলো যেহেতু সংঘাত পূর্ণ তাই যাবার আগে অবশ্যই খোঁজ খবর নিয়ে যাবেন । কোন সমস্যা হলে সাজেক যাবার অনুমতি দেয় না । এছাড়া শহর ও এর আশে পাশের সব জায়গায় যেতে পারবেন । আপনাদের সুবিধার্থে আমি কয়েকটি প্ল্যান দিচ্ছি । আপনারা আপনাদের সুবিধা মত মিলিয়ে প্ল্যান তৈরী করে নিবেন । যা আপনার ভ্রমণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখছি ।


ভ্রমণ প্ল্যান :

প্ল্যান - ১:
০ দিনঃ ঢাকা – খাগড়াছড়ি । ( আমরা সাধারণত রাতের বাসে যাই ও ঢাকাকে প্রাধান্য দেই তাই এভাবে লিখলাম ) ।
১ দিনঃ খাগড়াছড়ি – আলুটিলা ও গুহা – রিসাং ঝর্ণা – অপু ঝর্ণা – দেবতা পুকুর ।
২ দিনঃ খাগড়াছড়ি – দীঘিনালা – সাজেক – হাজাছড়া ঝর্ণা – ঝুলন্ত ব্রীজ – দীঘিনালা বন বিহার – খাগড়াছড়ি –ঢাকা ( রাতের বাসে ) ।
প্রথম দিন ২৮০০-৩০০০ টাকায়  চাঁদের গাড়ী রিজার্ভ নিয়ে সব গুলো স্থান দেখতেপারবেন । দ্বিতীয় দিন ৫০০০-৬০০০ টাকার মত নিবে ।


প্ল্যান - ২:
০ দিনঃ ঢাকা – খাগড়াছড়ি ।
১ দিনঃ খাগড়াছড়ি  –  দীঘিনালা – তৈদুছড়া ১ ও ২ ঝর্ণা – দীঘিনালা ।
২দিনঃ দীঘিনালা– সাজেক – হাজাছড়া ঝর্ণা– ঝুলন্ত ব্রীজ– দীঘিনালা বন বিহার – দীঘিনালা ।
৩ দিনঃ দীঘিনালা- নন্দরাম – সিজুক ১ ও ২ ঝর্ণা – খাগড়াছড়ি – ঢাকা ( রাতের বাসে )
প্রথম দিন চাঁদের গাড়ী রিজার্ভ না নিয়েও যেতে পারবেন । চাঁদের গাড়ী ১১০০-১২০০ টাকার মধ্যে রিজার্ভ নিয়ে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আসতে পারবেন । অথবা বাসে দীঘিনালা জন প্রতি ৪৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলে জন প্রতিভাড়া ১০০ টাকা । দীঘিনালা থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন ৪০০০- ৪৫০০ টাকার মত নিবে ।

প্ল্যান - :
০ দিনঃ ঢাকা – খাগড়াছড়ি ।
১ দিনঃ খাগড়াছড়ি – আলুটিলা ও গুহা – রিসাং ঝর্ণা – অপু ঝর্ণা – দেবতা পুকুর ।
২ দিনঃ খাগড়াছড়ি  –  দীঘিনালা – তৈদুছড়া ১ ও ২ ঝর্ণা – দীঘিনালা ।
৩ দিনঃ দীঘিনালা – সাজেক – হাজাছড়া ঝর্ণা – ঝুলন্ত ব্রীজ – দীঘিনালা বন বিহার – খাগড়াছড়ি – ঢাকা ( রাতের বাসে )


কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকাথেকে শ্যামলী, হানিফ ও অন্যান্য পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন । ভাড়া নিবে ৫২০ টাকা । শান্তি পরিবহনেরবাস দীঘিনালা যায় । ভাড়া ৫৮০ টাকা । এছাড়া BRTC ও সেন্টমার্টিন্স পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায় । 

যোগাযোগঃ 

সেন্টমার্টিন্স পরিবহন - আরামবাগঃ ০১৭৬২৬৯১৩৪১ , ০১৭৬২৬৯১৩৪০ । খাগড়াছড়িঃ ০১৭৬২৬৯১৩৫৮ । 

শ্যামলীপরিবহন- আরামবাগঃ ০২-৭১৯৪২৯১ । কল্যাণপুরঃ৯০০৩৩৩১ , ৮০৩৪২৭৫। আসাদগেটঃ ৮১২৪৮৮১ , ৯১২৪৫৪ । দামপাড়া(চট্টগ্রাম)ঃ ০১৭১১৩৭১৪০৫ , ০১৭১১৩৭৭২৪৯। 

শান্তিপরিবহন- ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির ভাড়া ৫২০ টাকা, দিঘিনালা ৫৮০ টাকা, পানছড়ি ৫৮০ টাকা, মেরুন ৬০০ টাকা, মাইনী ও মারিস্যা ৬৫০ টাকা। সায়দাবাদ থেকে সকাল ৮ টায় একটি গাড়ি খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। রাত ১০ টা থেকে ১১.১৫ পর্যন্ত চারটি গাড়ি যায়। রাত ১০ টার গাড়ি পানছড়ি যায়। রাত ১০.৪৫ এর গাড়ি মাইনী। রাত ১১.১৫ গাড়ি মারিস্যা যায়। সব গুলো গাড়িই সায়দাবাদের সময়ের ১ ঘন্টা আগে গাবতলী থেকে ছেড়ে আসে। সায়দাবাদ (ঢাকা)- ০১১৯১২১৩৪৩৮। আরামবাগ( ঢাকা ) –০১১৯০৯৯৪০০৭ । অক্সিজেন(চট্টগ্রাম) ০১৮১৭৭১৫৫৫২ । চট্টগ্রামথেকেও খাগড়াছড়ি যেতে পারবেন ।

BRTC এসিবাস  কদমতলী(চট্টগ্রাম): ০১৬৮২৩৮৫১২৫। খাগড়াছড়িঃ ০১৫৫৭৪০২৫০৭ ।


কোথায় থাকবেনঃ

খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেল সহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে । দীঘিনালায় কয়েকটি হোটেল থাকলেও দীঘিনালা গেস্ট হাউজের মান কিছুটা ভালো ।

খাগড়াছড়িঃ

পর্যটন মোটেলঃ 


এটি শহরে ঢুকতেই চেঙ্গী নদী পার হলেইপরবে । মোটেলের সব কক্ষই ২ বিছানার । ভাড়াঃএসি ২১০০ টাকা, নন এসি ১৩০০ টাকা । মোটেলের অভ্যন্তরে মাটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র বানানো আছে । যোগাযোগঃ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫ ।

গিরি থেবার : এটি খাগড়াছড়ি শহরের কাছে খাগড়াছড়ি ক্যন্টনমেন্টের ভিতরে অবস্থিত। এখানে সিভিল ব্যক্তিরাও থাকতে পারে। সব রুমই শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। যার মধ্যে ২ টি ভি আই পি রুম, প্রতিটির ভাড়া ৩০৫০ টাকা। ডাবল রুম ভাড়া ২০৫০ টাকা। একটি সিংগেল রুম যার ভাড়া ১২০০ টাকা। যোগাযোগ : কর্পোরেল রায়হান- ০১৮৫৯০২৫৬৯৪।

হোটেল ইকোছড়ি ইনঃ খাগড়াপুর ক্যান্টর্মেন্ট এর পাশে পাহাড়ী পরিবেশে অবস্থিত । এটি রিসোর্ট টাইপের হোটেল । যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২৬২৫ , ৩৭৪৩২২৫ ।

হোটেল শৈল সুবর্নঃ ০৩৭১-৬১৪৩৬ , ০১১৯০৭৭৬৮১২ ।

হোটেল জেরিনঃ ০৩৭১-৬১০৭১ ।

হোটেল লবিয়তঃ ০৩৭১-৬১২২০ , ০১৫৫৬৫৭৫৭৪৬ ,০১১৯৯২৪৪৭৩০।

হোটেল শিল্পীঃ ০৩৭১-৬১৭৯৫ ।


রুইলুই পাড়া/ সাজেক ঃ

সাজেক রিসোর্ট : এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রিসোর্ট। যা সাজেকে অবস্থিত। যার দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ আছে। ভি আই পি কক্ষ ১৫,০০০ টাকা। অন্যটি ১২,০০০ টাকা। অপর দুইটি ১০,০০০ টাকা করে প্রতিটি। খাবারের ব্যবস্থা আছে। যোগাযোগ : খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের গিরি থেবার মাধ্যমে বুকিং দিতে হবে। যার নম্বর : ০১৮৫৯০২৫৬৯৪। আরেকটি নম্বর : ০১৮৪৭০৭০৩৯৫।

রুন্ময় : এটি সাজেকে অবস্থিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটি রিসোর্ট। এর নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটির ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নিতে পারবেন। চারটি তাবু আছে প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন। যোগাযোগ : ০১৮৬২০১১৮৫২।

আলো রিসোর্ট : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এটিতে মোট ৬ টি রুম আছে। ডাবল রুম ৪ টি ( ২টি খাট করে) । যার প্রতিটির ভাড়া ১০০০ টাকা। সিংগেল রুম ২ টি । প্রতিটির ভাড়া ৭০০ টাকা । যোগাযোগ : পলাশ চাকমা - ০১৮৬৩৬০৬৯০৬।

রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউজ : এটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত। এখানে ১৫ জনের মত থাকতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হবে। নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন। এর কেয়ার টেকার মইয়া লুসাই দাদা সব ব্যবস্থা করে দিবে। লক্ষন নামেও একজন আছে, প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগীতা করবে। এখানে দুইটি টয়লেট আছে। একটি ফ্রি ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটির জন্য ২০০ টাকা প্রদান করতে হবে। যোগাযোগ : মইয়া লুসাই - ০১৮৩৮৪৯৭৬১২। লক্ষন - ০১৮৬০১০৩৪০২।


দীঘিনালাঃ

দীঘিনালা গেস্ট হাউজঃ এটি দীঘিনালা শহরের বাস স্ট্যান্ডের উল্টো পাশে অবস্থিত । এটি দীঘিনালার আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে একটু মানসম্মত । এখানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে রুম নিয়ে থাকা যাবে । উদ্বোধনের পরপরই ট্রাভেলার হিসেবে এই গেস্ট হাউজে প্রথম আমি ও আমার "বাংলার ট্রেকার"গ্রুপ থাকি এবং অনেককে পাঠানোর কারনে আমার রেফারেন্স দিলে কিছুটা সুবিধা পাবেন । নূর মোহাম্মদ(ম্যানেজার) – ০১৮২৭৪৬৮৩৭৭, কনক চাকমা : ০১৫৫৬৭০৩৮১৩।

শাহজাহান হোটেলঃ হোটেলটি  দীঘিনালা বাজারেই । ০১৮২৫৯৮০৮৬৭  (ম্যানেজার ) ০১৭৩২৫৭৩৬১৫ (মালিক)


কি দিয়ে ঘুরবেনঃ

খাগড়াছড়ি পাহাড়ী এলাকা তাই এই এলাকা পাবলিক বাস সার্ভিস কম । প্রায় সব রুটে পাবলিক বাস চললেও খুব কম । যতটুকু জানি সাজেক রোডে সপ্তাহে একদিন বাজারের দিন বাস যায় তাও একটি । তাই এর আশা করলে ভাল করে কিছু দেখা হবে না । ভাল ভাবে সব কিছু দেখতে হলে নিজস্ব গাড়ী বা রিজার্ভ চাঁদের গাড়ীই ভরসা । চাঁদের গাড়ীর ভাড়া একটু বেশী হলেও যদিবড় গ্রুপ যান তাহলে খরচ  অনেকটা কমে আসবে । চাঁদের গাড়ী দুই সাইজের হয় । ছোটটিতে ১৪ জনের মতো বসতে পারবেন । আর ছাদে বসলেতো অনেক । যদি পূর্বের অভিজ্ঞতা না থাকে তবে ছাদে উঠলে লোহার এঙ্গেল ধরে একটু সাবধানে বসবেন । পার্বত্য আঞ্চলের মধ্যে খাগড়াছড়িতে পর্যটক তুলনা মূলক কম যায় তাই অনেক গাড়ি পাবেন । শহরের শাপলা চত্তরের পাশে ও দীঘিনালা বাস ষ্ট্যান্ডে গাড়ী পাবেন । একটুদেখে শুনে দর দাম করে ঠিক করে নিবেন ।


কোথায় খাবেনঃ

শহরে কিছু ভাল মানের খাবার হোটেল থাকলেও দীঘিনালাতে তেমন মানের পাবেন না । তাই সৌন্দর্য দর্শনকে প্রাধান্য দিয়ে এই বিষয়টা একটু ছাড় দিতে হবে । সাজেক সহ ঝর্ণা দেখার দিন অবশ্যই শুকনো খাবার সাথে রাখবেন । আর খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই পানখাই পাড়ায় অবস্থিত সিস্টেম রেস্তোরায় অন্তত এক বেলা হলেও খেতে ভুলবেন না। এখানে খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পারবেন । যোগাযোগঃ০৩৭১-৬২৬৩৪ , ০১৫৫৬৭৭৩৪৯৩, ০১৭৩২৯০৬৩২২।


চাঁদের গাড়ি:

দীঘিনালার চাঁদের গাড়ির ড্রাইভার রাজ - ০১৮২০৭৪১৬৬২, ০১৮৪৯৮৭৮৬৪৯ । শিবু-০১৮২০৭৪৬৭৪৪ । সাজেক যেতে গাইডের তেমন দরকার নেই । তবুও প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন । আজম(গাইড, দীঘিনালা)- ০১৫৫৭৩৪৬৪৪২, ০১৭৩৭৪৪২২৭২ । ড্রাইভার ও গাইডকে আমার রেফারেন্স দিয়েকথা বললে সাজেক সহ খাগড়াছড়ির সব জায়গায় ওদের নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারবেন বলে আশা করছি । খাগড়াছড়ি থেকে আপনি বাস বা মাইক্রোভাড়া নিয়ে বা নিজস্ব গাড়ীতে ভিতরের মনোরম পাহাড়ী পথে রাঙ্গামাটি যেতে পারবেন । খাগড়াছড়ি থেকে বাসে মহালছড়ি গিয়ে মহালছড়ি জালুয়া পাড়া ঘাট থেকে ট্রলারে নানিয়ারচর হয়ে রাঙ্গামাটি যেতে পারবেন । এছাড়া খাগড়াছড়ি থেকে বাস বা জিপে (লোকাল নাম চাঁন্দেরগাড়ী )  লংগদু গিয়ে ট্রলারে করে রাঙ্গামাটি যেতে পারবেন ।

আপনার সুন্দর ,নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধবভ্রমনেই খুঁজে পাব আমার লেখার স্বার্থকতা । আপনার আনন্দ যাতে অন্যের বিষাদের কারণ না হয় সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন । আপনার ও আপনার সঙ্গীদের দ্বারা প্রকৃতিরও যেনকোন ক্ষতি না হয় সেটাও খেয়াল রাখবেন । আসুন আমরা সাঁজাই আমাদের পৃথিবী সবুজের সমারহে । রেখে যাই সবুজ , সুন্দর ও দূষন মুক্ত পৃথিবী পরবর্তী প্রজন্মের জন্য । সবাই ভাল ও নিরাপদে থাকবেন ।

সংগৃহীত : নিজাম উদ্দিন (https://www.facebook.com/banglar.trekker)

দেশের গোন্ডির পেরিয়ে, আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ... সড়ক পথে ঘুরে এলাম ছবির মতো সুন্দর গোছানো দেশ ভূটান.......

দেশের গোন্ডির পেরিয়ে, আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ... সড়ক পথে ঘুরে এলাম ছবির মতো সুন্দর গোছানো দেশ ভূটান....... কিভাবে যাবেনঃ ভূটান ভ্রমণের জ...